ভাঙা মাটির ঘর থেকে রাজ্যের মানচিত্র! কৌরবের কলমের জেরে মাথা উঁচু করলো তপনের বালাপুর
বালুরঘাট, ৭ মে —– শহরের গা ঘেঁষে নয়, গ্রামবাংলার ভাঙা মাটির ঘর থেকে জন্ম নিল এক জ্বলন্ত তারা। শহরের আলো ঝলমলে কোচিং নয়, বালাপুরের খুপরি ঘরের একাগ্রতায় ভর করে রাজ্যের সেরা দশে জায়গা করে নিল এক কৃষকের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮৮ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দশম এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রথম হয়েছে সে।
কৌরবের এই কৃতিত্বে উৎসবে মেতেছে গোটা নিমপুর গ্রাম। পাড়ার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে উচ্ছ্বাসের ঢেউ। যাঁরা কাল পর্যন্ত জানতেন না কোথায় বালাপুর হাইস্কুল, আজ তাঁদের চোখে স্কুলের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে একটিই নাম— কৌরব বর্মন।
তপনের মালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই বালাপুর গ্রামের বাসিন্দা কৌরব স্থানীয় হাইস্কুলেই পড়াশোনা করেছে। কলা বিভাগের ছাত্র সে। ইতিহাসে ৯৮, সংস্কৃত ও ভূগোলে ৯৭, আর এডুকেশনে ১০০ পেয়ে প্রমাণ করেছে— সুযোগ না থাকলেও সাফল্যের ইচ্ছা থাকলে পথ পাওয়া যায়।
কৌরব বলেন, ““আশা ছিল। তবে এতটা পাব, ভাবিনি। অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে গেলে পায়ের তলার মাটির কথাও ভাবতে হয়। সংসারে যে টানাপোড়েন আছে, তা অস্বীকার করতে পারি না।”
কৌরবের বাবা কার্ত্তিক বর্মন একজন কৃষক। নিজের পড়াশোনার সুযোগ হয়নি, কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতের জন্য নিজের সবটা দিতে তৈরি তিনি। আবেগে গলা কাঁপে তাঁর, “ছেলের এই কৃতিত্ব দেখার জন্যই হয়তো এতদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছি।” মা প্রার্চনা বর্মনের গলায় গর্ব মেশানো ভালোবাসা— “ওকে শুধু বলতাম, মন দিয়ে পড়। আজ বুঝছি, সেই কথাটা জীবনের সবচেয়ে সঠিক উপদেশ ছিল।”
বালাপুরের স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দীর্ঘ সোমা পালের। কিন্তু এমন ছাত্র ক’জনই বা দেখেছেন! তিনি বলেন, “ওর চোখে ছিল প্রশ্ন, আর মনে ছিল প্রমাণ করার তাগিদ। এই সাফল্য কেবল ওর নয়, গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরের জয়।” তবু আজ বালাপুর গর্বিত। প্রথমবার কোনও ছাত্র এই স্কুল থেকে পৌঁছেছে রাজ্যের সেরা দশে। এই সাফল্যে গ্রামে আজ নতুন করে আশার আলো।
মাটির ঘরে বসেই সে দেখিয়ে দিল— কেবল শহর নয়, আলোর দীপ্তি জ্বলে উঠতে পারে গ্রামবাংলার বুকেও। কৌরব বর্মনের কলম আমাদের আবার বিশ্বাস করাল— প্রতিভার কোনও ঠিকানা লাগে না, লাগে শুধু অদম্য মন আর অনড় স্বপ্ন।