বিজেপির ভোট প্রচারকারীরা তৃণমূলের কর্মী হতে পারে না! বালুরঘাটে বিস্ফোরক বিপ্লব মিত্র, উসকে গোষ্ঠীকোন্দলের জল্পনা
বালুরঘাট, ২৩ আগষ্ট —- লোকসভা ভোটে কারা তৃণমূলের নাম ভাঙিয়ে বিজেপির হয়ে ভোট প্রচার করেছিলেন, তা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। শনিবার বিকেলে বালুরঘাট স্টেডিয়ামে সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের সভা সেরে বেরিয়ে এসে সরাসরি নাম না করে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন তিনি। দক্ষিন দিনাজপুরে দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাঁর সাফ কথা, “লোকসভা ভোটে বারবার নিষেধ করার পরেও যাঁরা বিজেপি প্রার্থীর হয়ে ভোট চেয়েছেন, টাকা বিলি করেছেন, তাঁরা কখনওই তৃণমূল কর্মী হতে পারেন না। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আসনে বিজেপির হয়ে সরাসরি প্রচারে নামা মানুষদের আমরা কিভাবে দলের লোক ভাবব?”
মন্ত্রী আরও স্পষ্ট করে দেন, দলের কৃষক সংগঠনের সভায় এমন মানুষদের ডাকবার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর এই স্পষ্ট মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনীতিতে। কারণ, বৃহস্পতিবার গঙ্গারামপুরের রবীন্দ্রভবনে কিষান খেত মজদুর সংগঠনের সভায় জেলার একাধিক শীর্ষ তৃণমূল নেতা আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তাঁরা। তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন জেলা যুব সভাপতি অম্বরিশ সরকার, রাজ্য নেতা গৌতম দাস, প্রাক্তন জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার, শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি নামিজুর রহমান ও জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান তোরাব হোসেন মণ্ডল। সভায় রাজ্য সভাপতি পূর্ণেন্দু বসুর উপস্থিতিতেও তাঁদের কাউকে দেখা যায়নি।
এই নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। বাদ পড়া নেতাদের অভিযোগ—ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁদের ডাকেননি জেলা কৃষক সংগঠনের সভাপতি সাহেনশা মোল্লা। যদিও পাল্টা তিনি আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে দাবি করেন, “সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মিথ্যে রটিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।” কিন্তু জেলার রাজনীতিতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের ভেতরে গোষ্ঠীকোন্দলের জল্পনা তীব্র হয়েছে।
অন্যদিকে, বাদ পড়া নেতাদের অন্যতম প্রাক্তন জেলা সভাপতি মৃণাল সরকারের কটাক্ষ, “মন্ত্রীবাবুর বক্তব্য অনুযায়ী আমরাই নাকি বিজেপির হয়ে কাজ করেছি! তাহলে রাজ্য নেতৃত্ব এখন স্পষ্ট করে বলুক, আসলে এই জেলায় কারা গোপনে বিজেপির হয়ে প্রচার করেছিলেন।”
তৃণমূলের অন্দর থেকে গোষ্ঠীকোন্দল উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা যতই হোক না কেন, বাস্তবে যে ক্ষোভ আর অবিশ্বাস দিন দিন বাড়ছে, শনিবারের ঘটনা তাতে ফের প্রমাণিত হল। ফলে প্রশ্ন একটাই—দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূল কাকে বিশ্বাস করবে, আর কাকে অবিশ্বাস?