বালুরঘাটে ডাইনি অপবাদে নারকীয় অত্যাচার!

0
189

বালুরঘাটে ডাইনি অপবাদে নারকীয় অত্যাচার! আদিবাসী পরিবারকে গ্রাম ঘুরিয়ে মারধর, আতঙ্কে ঘরছাড়া দুই মহিলা ও তিন শিশু

বালুরঘাট, ৩১ মেব—– একবিংশ শতকেও কুসংস্কারের বিষদাঁত এখনো অক্ষত। তারই জ্বলন্ত প্রমাণ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট মহকুমার চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নওপাড়া। শুক্রবার রাতে ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী পরিবারকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করে গোটা গ্রাম ঘোরালো একদল উত্তেজিত গ্রামবাসী। শারীরিকভাবে নিগৃহীত হলেন দুই মহিলা ও তিন শিশু। প্রাণনাশের আশঙ্কায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হল অসহায় হতদরিদ্র এক আদিবাসী পরিবার।
আমরাইলের নওপাড়ার বাসিন্দা শিউলি হাসদার(পরিবর্তিত নাম) অভিযোগ, বাড়িতে নিয়মিত পুজোপাঠ করতেন সেই কারণেই তাঁকে এবং তাঁর ছোট মেয়েকে ‘ডাইনি’ তকমা দেয় গ্রামবাসীরা। শুক্রবার রাতে তাঁদের বাড়ি থেকে একপ্রকার টেনে হিঁচড়ে বের করে গ্রাম ঘোরানো হয়। সঙ্গে চলতে থাকে বেধড়ক মারধর। ছোট ছোট তিন শিশুও সেই হিংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি।

শিউলিদেবীর স্বামী বহু আগেই প্রয়াত। পুলিশ জানিয়েছে, চিঙ্গিশপুরের নওপাড়ার বাসিন্দা স্বর্ন সরেন। যার স্বামী পরসেন বাস্কে বেশকিছুদিন আগে মারা যায়। যার পর থেকেই তার বাড়িতে ছোট দুটি শিশুকে মা শিউলি হাসদা(পরিবর্তিত নাম) ও বোন শর্মিলা সরেনের কাছে রেখে ভিনরাজ্যে কাজে চলে যান বড় মেয়ে স্বর্ন। যেখানেই বেশ কয়েকবছর যাবত বাস করছিলেন তারা। শুক্রবার রাতে সেই বাড়ি থেকেই তাদের টেনে হিচড়ে বের করে গোটা গ্রাম ঘুরিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যা নিয়ে অভিযোগকারিণীর আশঙ্কা যেকোন সময়ে তাদের প্রানহানি হতে পারে। আর তা নিয়েই কার্যত আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। ঘটনা জানিয়ে অনিল কিস্কু, কমলেশ সরেন, রাজু সোরেন, নির্মল হাসদা, মেরি কিস্কু সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি।

চোখের জল মুছে ছোট মেয়ে জানায়, “ডাইনি অপবাদ দিয়ে গোটা গ্রাম আমাদের ঘিরে ধরেছে। কেউ কথা শোনে না। বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই, তাই কেউ পাশে দাঁড়াচ্ছে না।”
এখন চোখে যেন কিছুটা অন্ধকার দেখছে অসহায় পরিবারটি। অভিযোগকারী মহিলা বলেন, এক বছর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। সালিশি সভায় মিটমাট হলেও পরিস্থিতি যে আদতে বদলায়নি, তা শুক্রবারের ভয়াবহতা ফের একবার প্রমাণ করল।

এদিকে, ঘটনার নেপথ্যে সম্পত্তির জটিলতাও উঠে আসছে। অভিযোগকারিণীর আত্মীয় রবি হাসদার দাবি, শিউলিদেবীর বড় মেয়ের মৃত স্বামীর নামে প্রায় তিন বিঘা জমি রয়েছে। পরিবারটি পুরুষহীন হওয়ায় সেই জমি দখলের অভিসন্ধিতেই এমন বর্বরতা চালানো হয়েছে। তাঁর কথায়, “ডাইনি এক বিভীষিকাময় কুসংস্কার। এ দিয়ে নিরীহ মানুষকে শিকার করা হচ্ছে।”

বালুরঘাট থানার আইসি সুমন্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, “ঘটনার কথা জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি।”

চিঙ্গিশপুরের ঘটনা যেন আজো অন্ধকারের এক নির্মম অধ্যায়—যেখানে কুসংস্কারের ছায়ায় আজও একাকী, অসহায়, নারী-শিশুরা। সভ্যতার মুখে এই লজ্জা আরও একবার প্রশ্ন তোলে—আজও কি আমরা মানুষ হলাম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here