“বালি ফেলে পালাল মাফিয়া! পুলিশের সামনেই ‘রাতের রাজপথে’ চোরাপাচারের কাহিনি”
বালুরঘাট, ৪ এপ্রিল ——-
আলো-আঁধারির খেলা চলছিল মঙ্গলপুরে। হঠাৎ, গভীর রাতে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কে দেখা যায় ধুলো-ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে আসছে এক বালি বোঝাই লরি। গতি যেন বেপরোয়া ষাঁড়! উল্টো দিক থেকে আসা পুলিশের গাড়ি চোখে পড়তেই ব্রেকের ঘর্ষণে কেঁপে ওঠে রাতের নিস্তব্ধতা।
মুহূর্তের মধ্যে লরি দাঁড়ায়। আর তার পরেই—জাতীয় সড়কের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাহাড়প্রমাণ বালি। ঠিক যেন কেউ হাতছাড়া হওয়া প্রমাণ লোপাট করতে মরিয়া। দেখতে দেখতে মিলিয়ে যায় লরি। অন্ধকার গিলে ফেলে প্রমাণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একটি বালি বোঝাই লরি হিলির দিকে ছুটে যাচ্ছিল বেপরোয়া গতিতে। রাতের অন্ধকারে উল্টো দিক থেকে আসা একটি পুলিশের গাড়ি দেখতে পেয়েই চালক দ্রুত লরিটি থামিয়ে মঙ্গলপুরে রাস্তার মাঝখানে বালি ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে লরিটি আটক হলেও রাস্তায় ফেলে রাখা বালির একটি বড় অংশ অন্য একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় মাফিয়ারা।
শুক্রবার সকাল হতেই বালুরঘাট শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জমে ওঠে উৎসুক জনতা। পাথরে পা না রাখা যায়—চতুর্দিকে ছড়ানো বালি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা লরিটি আটক করলেও রাস্তার উপর ফেলে যাওয়া বালির সিংহভাগ মাফিয়ারা রাতেই অন্য ট্রাক্টরে করে সরিয়ে ফেলেছে।
বালুরঘাট সদর ডিএসপি বিক্রম প্রসাদ জানিয়েছেন, শহরের একটি প্রান্তে এ ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, এটা ‘এক রাতের গল্প’ নয়। দিনের পর দিন রাতের আড়ালে চলছে অবৈধ বালি কারবার। পুলিশ আসে, যায়—কিন্তু চক্র রয়ে যায় অটুট।
এ প্রশ্নও উঠছে—এই ‘বালি সাম্রাজ্য’-র ছায়া কি প্রশাসনের ভিতরেও পড়েছে? নাকি পুলিশের সামনেই পালানো এই লরি আসলে বৃহৎ কোনও চক্রের ছোট্ট একটি দানা মাত্র?
উত্তর খুঁজছে শহর। আঁধারে নয়, আলোয়।