বালিশ চাপা দিয়ে মেয়েকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ মায়ের। হাড়হিম করা ঘটনায় শিউরে উঠেছেন গঙ্গারামপুরের পাটুল গ্রামের বাসিন্দারা
শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট, ১৫ জুন ——— নিজের নয় বছরের মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করল মা! রবিবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার অন্তর্গত পাটুল গ্রামে ঘটে গেল এমনই হাড়হিম করা এক ঘটনা। যা শুনে রীতিমতো শিউরে উঠছে গোটা এলাকা। প্রতিবেশীদের দাবি, মায়ের গোপন ‘কুকর্ম’ দেখে ফেলেছিল মেয়েটি। সেই অপরাধেই তাকে খুন হতে হল।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মেয়েটির নাম আফরিন পারভিন (৯)। জন্ম থেকেই সে মূক ও বধির। আফরিনের বাবা আবদুল আজিজ পেশায় রাজমিস্ত্রী। রোজকার মতোই এদিন সকালে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঘরে ছিল শুধু মা রিম্পা বিবি ও দুই শিশু সন্তান। অভিযোগ, সেই সুযোগেই নিজের মেয়েকে ঘরের ভিতরে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন রিম্পা। তারপর স্বামীর না ফেরার আগেই নিজেই হাঁটতে হাটতে পৌঁছে যান স্থানীয় গঙ্গারামপুর থানায়, মুখে স্বীকারোক্তি দেন— “আমি মেয়েকে খুন করেছি।”
এই খবরে তোলপাড় পুরো পাটুল গ্রাম। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় এবং অভিযুক্ত মাকে গ্রেফতার করে। গঙ্গারামপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপায়ন ভট্টাচার্য জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিক তদন্তে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের প্রমাণ মিলেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে। তদন্ত চলছে।”
তবে এখানেই শেষ নয় রহস্য। প্রতিবেশী লফলত মিয়া বলেন, “আমরা আগেই বুঝেছিলাম, কিছু একটা গড়বড় চলছে ওই বাড়িতে। মেয়েটা ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছিল, ও কিছু একটা দেখে ফেলেছে। হয়তো সেটা মা রিম্পার অপকর্ম ছিল।”
অন্য প্রতিবেশী লুৎফা বেগমের কথায়, “একজন মা কী করে এমনটা করতে পারে! হয়তো নিজের অপকর্ম ঢাকতেই মেয়েকে খুন করল।”
মেয়েটির আত্মীয়া ইয়ানুর খাতুন জানান, “কিছু দিন আগে আফরিন বারবার আমাকে ইশারায় বোঝাচ্ছিল, ও ভয় পাচ্ছে, ওর ভাল লাগছে না। তখন কিছু বুঝিনি। এখন সব স্পষ্ট।”
এদিকে আফরিনের বাবা আবদুল আজিজ যেন বাকরুদ্ধ। বলছেন, “এই ঘটনা আমার পরিবারটাকে শেষ করে দিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। পুলিশের উপর ভরসা রাখছি।”
পুলিশের একাংশ মনে করছে, আফরিন হয়তো মায়ের এমন কিছু মুহূর্ত দেখে ফেলেছিল, যা তার সামনে একেবারেই দেখার কথা নয়। সেই ‘দেখে ফেলা’ই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল।
এদিনের এই নারকীয় ঘটনা ঘিরে পাটুলের আকাশে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন— ‘মা’ যদি খুনি হয়, তাহলে বাকি পৃথিবীটা কীভাবে বিশ্বাস করা যাবে?
Home উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর বালিশ চাপা দিয়ে মেয়েকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ মায়ের। হাড়হিম করা ঘটনায়...