বাবার মুদির দোকান, ছেলে রাজ্যে নবম! সফলতার সংজ্ঞা নতুন করে লিখলো বালুরঘাটের অনিক
বালুরঘাট, ২ মে —– পাড়ার মাথায় ছোট্ট মুদি দোকান। টিনের চালের নিচে সারাদিন বাবার হিসেব-নিকেশের খচখচ শব্দ। তারই ফাঁকে এক ছেলেমানুষ স্বপ্ন বুনে গেছে নীরবে। আর শুক্রবার সকাল হতেই সেই স্বপ্ন রূপ পেল সোনালি সত্যে—মাধ্যমিকে রাজ্যে নবম স্থান!
চকভৃগুর অনিক সরকার। পেশায় মুদি ব্যবসায়ী কমলেশ সরকারের ছেলে। অর্থনৈতিক অনটন আর প্রতিদিনের সংগ্রামের মধ্যেও অনিক এ বছর মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৮৭ নম্বর। বালুরঘাট হাইস্কুলের ছাত্র অনিক আজ শুধু বাবা-মায়ের নয়, গোটা জেলার গর্ব।
তাঁর ছোটবেলা থেকেই একরোখা নিষ্ঠা। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে একটানা স্কুলের প্রথম। নিয়ম মেনে পড়া, চাপহীন মন, আর একটা জেদ—নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। টেস্ট পরীক্ষায় পেয়েছিল ৬৮২। কিন্তু শেষবেলায় ছেলেটা যেন নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেল।
বাবা কমলেশবাবু বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, ওর স্বপ্ন যেন আটকে না পড়ে । তাই যা কিছু পেরেছি, দিয়েছি।” গৃহবধূ মা আভা সরকারের চোখে জল, কিন্তু গলায় গর্ব, “ওকে কখনও পড়তে বলতে হয়নি। বরং বলতাম, একটু বিশ্রাম নে।”
ছেলের রেজাল্ট হাতে নিয়ে চকভৃগুর আকাশে যেন উৎসবের রঙিন আতশবাজি ফুটেছে। প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছেন কমলেশ সরকারের বাড়িতে। কারও হাতে মিষ্টির বাক্স, কারও চোখে বিস্ময়।
তবে অনিকের পা মাটিতেই। বলে, “র্যাঙ্ক করার চেয়ে শেখাটাই বড় কথা। আমি বিজ্ঞান নিয়ে এগোতে চাই। বাবার দোকান হোক বা বিজ্ঞানের ল্যাব—যেখানেই থাকি, মনটা যেন জ্বলতে থাকে জানার আগুনে।”
ছন্দা রায় সরকারের মতো প্রতিবেশীরাই বলেন, “এই ছেলেটা একদিন জেলার মুখ উজ্জ্বল করবে জানতাম। তবে ওর ভবিষ্যৎ ও-ই ঠিক করুক। আমরা পাশে আছি।”
আজ বালুরঘাটের চকভৃগু যেন বলে উঠছে—স্বপ্ন বড় হলে, ঘরের সাইজ কোনোদিন বাধা হয় না।