বাংলা বিহার সীমান্ত থেকে উদ্ধার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের নিখোঁজ তৃণমূল নেতার মৃতদেহ

0
535

বাংলা বিহার সীমান্ত থেকে উদ্ধার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের নিখোঁজ তৃণমূল নেতার মৃতদেহ। সিবিআই তদন্তের দাবি পরিবারের

হরিশ্চন্দ্রপুর;২৪জুলাই: অবশেষে ৬ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতা তথা ইট ব্যবসায়ী আনেসুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো বিহারের কাঠিহার জেলার বলরামপুর থানা এলাকার রেল লাইনের ধারে। স্থানীয় সূত্রে খবর বলরামপুর থানা এলাকার ডালখোলা এবং বারসই রেল স্টেশনের মাঝে রেল লাইনের ধারে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিসুর বাবুর মৃতদেহ দেখতে পায় ওই এলাকার মানুষ। এরপরই মৃতদেহ উদ্ধার করে বলরামপুর থানার পুলিশ। এরপর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কাঠিহার মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের পর আজ শনিবার ভোর বেলা ভালুকা হাতি ছাপা গ্রাম এ মৃতদেহ নিয়ে আসে তার পরিবার। সেখানেই আজ দুপুরে তাকে কবরস্থ করা হবে।

এদিকে গত সাত দিন থেকে নিখোঁজ থাকার পরে বিহার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয় স্বভাবতই আনেসুর বাবুর পরিবারের লোকেরা এদিকে খুন বলে দাবি করেছেন। এর আগে আনেসুর বাবু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে পরিবারের লোকেদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ব্যবসায়িক বিবাদের জেরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এর পরে পরে আনেসুর রহমানের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়াতেই তাদের দাবি আরো জোরালো হলো। এদিককে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আনেসুর রহমানের পরিবার।

প্রসঙ্গত গত রবিবার সকাল বেলায় কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার খোঁজ পায়নি বাড়ির লোকেরা। রাত গড়িয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় ভালুকা ফাঁড়ি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানাতে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার পরিবারের লোকেরা। তার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে। আনেসুর বাবুর স্ত্রী সহ তার পরিবারের লোকেদের দাবি ছিল বেশ কিছুদিন আগে কালিয়াচকের লোকের সঙ্গে ইটভাটা ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে গণ্ডগোল হয়েছিল এবং কিছুদিন আগে এলাকার সুলতাননগর গ্রামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হয় আনেসুর বাবুর। সে সময় তাদের দাবি ছিল আনিসুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে এদের হাত থাকতে পারে। এরপরে গতকাল বিকেলে বিহার সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে আনেসুর রহমানের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে তার পরিবার।

এদিকে তৃণমূল নেতা ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে হরিশ্চন্দ্রপুর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। এলাকায় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। এবারের বিধানসভা ভোটে শাসকদলের হয় এলাকায় ভালোই ভোটের কাজ করেছিলেন। এলাকায় দুটি বুতের কনভেনার হিসেবে শাসক দলের হয়ে ভোট করেছিলেন আনেসুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে আনেসুর রহমানের ছোট ভাই সাইদুর রহমান জানান আমরা গতকাল বিকেলের দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পারি আমার দাদার মৃতদেহ বিহার সীমান্তের একটি এলাকায় গাছের সঙ্গে ঝুলানো আছে। তারপরই থানায় যোগাযোগ করে আমরা জানতে পারি মৃতদেহ কাঠিহার মেডিকেল কলেজে রাখা আছে। সেখানেই আমার দাদার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। গত রবিবার থেকে আমার দাদা নিখোঁজ ছিল। আমাদের অভিযোগ দাদার মৃত্যুর পিছনে বড়সড় কোন চক্রের হাত রয়েছে। এর আগে ব্যবসায়িক বিবাদের জেরে আমার দাদাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।আমাদের দাবি এদের মধ্যে কেউ আমার দাদাকে হত্যা করে থাকতে পারে। আমাদের দাবি স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে নয় সিবিআই দিয়ে আমার দাদার মৃত্যু তদন্ত করা হোক।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মকবুল হোসেন জানান এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল নেতা ব্যবসায়ী আনেসুর রহমান গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। প্রথমে নিখোঁজের অভিযোগ করলেও পরে আমরা অপহরণের অভিযোগ জানায়।গতকাল বিকেল নাগাদ আমরা জানতে পারি বিহার সীমান্তবর্তী এলাকায় রেললাইনের ধারে ঝুলন্ত অবস্থায় আনেসুরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার সন্দেহ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আনিসুর রহমানকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। আমরা অপরাধীর শাস্তি চাই। আমাদের দাবি অবিলম্বে প্রশাসন এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুক। অপরাধীর শাস্তি না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।

এলাকার আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন জানান গত ৬ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন এলাকার বাসিন্দা আনেসুর রহমান। নিপাট ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন এলাকায়। গতকাল বিকেলে আমার জানতে পারি বিহারের একটি এলাকা থেকে আনেসুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ওই এলাকার পুলিশ। তারপরই খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার মৃতদেহ কাঠিহার মেডিকেল কলেজে রাখা আছে। আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে তার মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে আসি। আমাদের দাবি আনেসুর বাবুকে যারা অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হোক। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক। না হলে সাধারণ মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।

এদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ এই ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই তদন্ত শুরু করেছিল। আনেসুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ প্রশাসন। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানান ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি আমরা সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here