বহুদিন ধরে সাইকেল মেরামতির কাজ করে জীবনযুদ্ধে লড়াই অঞ্জলিদেবীর, পুজোর মুখে বাড়তি রোজগারের আশায় চালান চায়ের দোকানও
শীতল চক্রবর্তী বালুরঘাট, ২৯ অগাস্ট।পুরুষদের একচেটিয়া পেশা বলেই দীর্ঘদিন ধরে ধরা হতো সাইকেল মেরামতের কাজকে।কিন্তু সেই ধারণাকে ভেঙে সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারী ব্লকের ব্রজবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণবাটী গ্রামের অঞ্জলি বর্মণ (৪৬)।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুশুম্বা মোড়ে বসে তিনি একমনে সাইকেল মেরামত করেন। জীবনের কঠিন সংগ্রামে সংসার টিকিয়ে রাখতে এই কাজই এখন তাঁর ভরসা। পুজোর আগে বাড়তি রোজগারের আশায় সেখানেই চালান চায়ের দোকানও।
অঞ্জলিদেবীর ছোট সংসারে স্বামী অনিল বর্মণ,দুই ছেলে ও তিনি নিজে। সংসারের হাল ধরেছেন তিনিই।স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ায় পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এসে তিনি এমন কাজ করেন বলে জানা গেছে। অঞ্জলিদেবীর কোথায়,“স্বামী আগে এই কাজ করতেন।তাঁকে দেখে-দেখেই আমি ধীরে ধীরে সাইকেল সারাই শিখে ফেলি। সকালে বাড়ির কাজ সামলে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে দোকানে চলে আসি। এরপর থেকেই সারাদিন আমি দোকান সামলাই। পুজোর মুখে বাড়তি রোজগারের আশায় সাইকেলের দোকানে চায়ের দোকান তৈরি করেছেন তিনি।
কুশুম্বা মোড়ের ছোট্ট চাটাইয়ের দোকানেই চলছে তাঁর জীবনের লড়াই।স্থানীয় অনেকেই অবাক হয়ে দেখেন, কীভাবে একজন মহিলা পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইকেলের টায়ার ফাটল থেকে শুরু করে চেইন বদল, ব্রেক ঠিক করা—সব কাজ দক্ষ হাতে করছেন। অঞ্জলিদেবী বলেন,“এই ছোট দোকানটাই এখন আমাদের সংসারের ভরসা।টাকার অভাবে যন্ত্রাংশ কিনে সাইকেল বিক্রি করতে পারি না। একটা পাকা দোকানঘর হলে ভালো হতো।সরকারি সাহায্য বা ব্যাংক থেকে লোন পেলে খুব উপকার হত। পুজোর মুখে বাড়তি রোজগারের আশায় চায়ের দোকানে চালান তিনি বলে জানান।”
স্থানীয় বাসিন্দা হিমাংশু মাহাতো বলেন,“একজন মহিলা সাইকেল সারাই করছেন—ভাবাই যায় না। ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় যথেষ্ট নাম করেছেন।” গঙ্গারামপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মন্তব্য,“বর্তমান সমাজে কোনো কাজেই যে মহিলারা পিছিয়ে নেই,অঞ্জলিদেবীই তার প্রমাণ।”
এপ্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গণেশ প্রসাদ জানান,“ওই মহিলা যদি কোনো সহযোগিতা চান তাহলে তাঁকে সহযোগিতা করা হবে।” বংশীহারী ব্লকের বিডিও সুব্রত বল বলেন,“পঞ্চায়েত থেকে সহযোগিতা দেওয়ার সুযোগ থাকলে তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে।”
স্থানীয় ছেলেরা দোকানে এসে ছোটখাটো কাজে অঞ্জলিদেবীকে সাহায্য করে।তাঁদের প্রতিও তিনি সহানুভূতিশীল।এলাকার মানুষ মনে করেন,একদিকে যেমন নিজের পরিবারকে টিকিয়ে রাখার লড়াই চালাচ্ছেন তিনি, অন্যদিকে সমাজের কাছে নজির স্থাপন করছেন।
অঞ্জলিদেবীর এই অনন্য জীবনযুদ্ধ আজ অনেক মহিলাকে সাহস জোগাচ্ছে। সমাজের চাপে থেমে না গিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে কেবল কাজের মাধ্যমেই তিনি প্রমাণ করছেন—মেয়েরা চাইলে কোনো কাজেই পিছিয়ে থাকে না।