ফসলহানি ও ঋণের দুশ্চিন্তায় কৃষকের আত্মহত্যা বালুরঘাটে! রাজ্যের নির্দেশে মৃতর বাড়িতে ভিড় কৃষক নেতাদের
বালুরঘাট, ৯ ডিসেম্বর —— ফসলহানির চাপ কতটা ভয়ানক হতে পারে, দেবীপুরের ঘটনা যেন তার নির্মম উদাহরণ। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীপুরে ধান ভাল না হওয়া এবং ঋণের বোঝায় জর্জরিত কমল মণ্ডলের আত্মহত্যায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরো গ্রাম যেন নিস্তব্ধ—তবুও মানুষের ঢল থামছে না মৃত কৃষকের বাড়িতে।
এদিকে রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সকালেই সেখানে পৌঁছন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কিষাণ খেত মজদুরের জেলা সভাপতি সাহেনশা মোল্লা। সঙ্গে কয়েকটি ব্লকের কৃষক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বরা। তাঁদের উপস্থিতিতে বাড়ির উঠোনে তৈরি হয় শোকসভা—এবং সেখানেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের স্ত্রী শান্তনা মণ্ডল। ষাটোর্ধ এই বৃদ্ধার চোখের জল থামেনি কিছুতেই।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,
“সব শেষ হয়ে গেল। ধান হয়নি। ঋণের টাকার চিন্তায় দিনরাত ঘুমোতে পারত না তার স্বামী। সে যে এমন সিদ্ধান্ত নেবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।
শোকস্তব্ধ পরিবেশে বৃদ্ধার কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দেন সাহেনশা মোল্লা—
এমন মৃত্যু আর যেন না হয়। পরিবারটির পাশে আমরা আছি, থাকব। রাজ্যের নির্দেশেই আর্থিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
মৃত কৃষকের ছেলে মিঠুন মণ্ডলের কথায়, নিজেদের জমি না থাকায় লিজ নেওয়া জমিতে চাষ করতেন তাঁর বাবা। এ বছর ফলন এমনই খারাপ হয়েছে যে রাতের পর রাত দুশ্চিন্তায় কষ্ট পেতেন তিনি। রবিবার রাতে চরম সিদ্ধান্ত নেন কমল। আমরা কিছুই বুঝিনি। ঘুমের মধ্যেই… সব শেষ, ভাঙা গলায় বলেন মিঠুন।
তৃণমূল নেতা অমর দাস ও সুবীর কুমার মণ্ডলরা জানান, ফসলহানির ফলে এক কৃষকের প্রাণ যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দলের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে দীর্ঘমেয়াদি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই গ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের ভিড় জমে মৃতের বাড়িতে। কেউ পরিজনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেউ আবার হতাশ গলায় বলছেন- চাষাবাদ এতটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে যে কেউ কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন।
কমলবাবুর মৃত্যু আবারও প্রশ্ন তুলে দিল—অনিশ্চিত কৃষিজীবনে ভরসার হাতটা কোথায়? ফসলহানির ভয়াবহতা যে কতটা গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে, দেবীপুরের এই ঘটনা যেন তার নির্মম প্রমাণ।



















