পুনর্ভবা নদীর বুক থেকে ইতিহাসের পুনর্জন্ম! শতাব্দীপ্রাচীন লক্ষ্মীনারায়ণের মূর্তি উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য , মন্দিরে রাখার দাবি এলাকাবাসীর
বালুরঘাট, ২ এপ্রিল —– নদীর জলের তলায় এতদিন ঢাকা ছিল এক অনন্য ঐতিহ্য! দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা নদীর বুক থেকে এক যুবকের পায়ের ধাক্কায় উঠে এল ইতিহাসের এক মহামূল্যবান সম্পদ— বিশালাকার কালো কষ্টিপাথরের লক্ষ্মীনারায়ণের মূর্তি! বুধবার দুপুরে এই অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী থাকলেন স্থানীয়রা। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে, ভিড় জমে নদীর ধারে। কেউ বলছেন, হারিয়ে যাওয়া রাজবংশের ধ্বংসাবশেষ, কেউ বা মনে করছেন, দেবতাদের কৃপা আবার ফিরে এসেছে এই অঞ্চলে!
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এদিন দুপুরে এক যুবক প্রতিদিনের মতো নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। আচমকা পায়ের নিচে কোনও শক্ত জিনিসের অস্তিত্ব টের পান। কৌতূহলী হয়ে সেটি টেনে তুলতে গিয়ে বোঝেন, ওজন অত্যন্ত বেশি। এরপর কয়েকজনকে ডেকে আনেন। একসঙ্গে টানতে গিয়েই চোখ কপালে! নদীর বুক থেকে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় কালো কষ্টিপাথরের বিশাল মূর্তি— সুস্পষ্ট লক্ষ্মীনারায়ণ! তিন ফুট উচ্চতা ও দেড় ফুট চওড়া এই মূর্তির কারুকাজ যেন ইতিহাসের এক নিখুঁত ছোঁয়া বহন করে।
এই রহস্যজনক আবিষ্কারকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূর্তির নির্মাণশৈলী অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং প্রাচীন রাজবংশের ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। ইতিহাসবিদ অজিত ঘোষ ও সুকুমার সরকার মনে করছেন, এটি পাল বা সেন যুগের তৈরি মূর্তি হতে পারে, অর্থাৎ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো! তাঁদের ভাষায়, “এটি কেবলমাত্র একটি মূর্তি নয়, আমাদের অতীতের অমূল্য সম্পদ। সম্ভবত কোনও সময়কালে কোনও আক্রমণ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এটি নদীতে হারিয়ে গিয়েছিল।”
এদিকে এই মূর্তি উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নদীর ধারে ভিড় উপচে পড়ে। এলাকাবাসীর একটাই দাবি— “এই ঐতিহ্য আমাদের, মূর্তিটি এখানকার কালীমন্দিরে রাখা হোক!” স্থানীয় বাসিন্দা সুদেব সরকার বলেন, “এটি দেবতাদের আশীর্বাদ! আমরা চাই, মূর্তিটি এখানেই থাকুক, আমাদের মন্দিরেই স্থাপন করা হোক।” সুবোধ সরকার আরও যোগ করেন, “এটি শুধু একটি মূর্তি নয়, আমাদের পাড়ার সংস্কৃতির অংশ। আমরা কোনওভাবেই চাই না প্রশাসন এটি অন্য কোথাও সরিয়ে নিক।”
কিন্তু এই দাবিতে সিলমোহর পড়েনি প্রশাসনের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। মূর্তিটি আপাতত থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গঙ্গারামপুর থানার আইসি শান্তনু মিত্র বলেন, “মূর্তিটি থানায় আনা হয়েছে, প্রশাসনের উচ্চস্তরে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এখন প্রশ্ন একটাই— এই শতাব্দীপ্রাচীন লক্ষ্মীনারায়ণের মূর্তি কি স্থানীয়দের আবেগের সম্মান জানিয়ে মন্দিরেই স্থাপন করা হবে, নাকি প্রত্নতত্ত্ব দফতরের হাতে তুলে দিয়ে গবেষণার জন্য পাঠানো হবে? আপাতত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় গোটা গঙ্গারামপুর! তবে একটিই সত্য— পুনর্ভবা নদীর বুক থেকে যে ঐতিহ্য জেগে উঠেছে, তা রীতিমতো ইতিহাস গড়তে চলেছে!