গঙ্গারামপুর পৌরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ডের পুরাণপাড়া এলাকায় বাসিন্দারা ধূমধাম সহকারে বাবা মা হারা অনাথ মেয়ের বিয়ে দিলেন প্রতিবেশীরাই, সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই
শীতল চক্রবর্তী ,গঙ্গারামপুর ,২১জুলাই ,দক্ষিণ দিনাজপুর:-দির্ঘদিন আগে মা মারা গেছেন, বাবাও জন্মের পর থেকে নিখোজ। বাবা মা হারা সেই অনাথ মেয়েটার অভিভাবক হয়ে বিয়ে দিলেন প্রতিবেশীরাই। বরযাত্রী থেকে নিমন্ত্রিতদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হল জাকজমকভাবে, মনখুলে বিয়েতে আনন্দ উপভোগ করলেন সকলেই। বুধবার রাতে এমনি এক বিয়ের অনুষ্টানের দৃশ্য দেখা গেল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পৌরসভার১১নম্বর ওয়ার্ডের পুরাণপাড়া এলাকায়। প্রতিবেশী মহিলাদের এমন উদ্যাগে বাকি পুরুষেরাও এগিয়ে এসেছেন। মহিলা উদ্যাগতা থেকে প্রতিবেশীরা জানালেন, এমন কাজে এগিয়ে এসে খুবই ভালো লাগছে। আগামীতে অন্য জায়গাতেও এমন কাজে এগিয়ে আসবে সকলেই সেই দাবি তাঁরা করলেন। প্রতিবেশীদের এমন সহযোগীতার কথা মনে থাকবে বলে জানালেন মা,বাবা হারা অনাথ পাত্রীও। দায়িত্ব পালন করে খুশি হয়েছেন পাত্রও।

বুধবার সকাল থেকে বিয়ের অনুষ্টানের জন্য হয়েছে সমস্ত ধরনের নিয়ম পালন ।গঙ্গারামপুর পৌরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ডের পুরাণপাড়ার শীতলা মন্দির এলাকায় সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর।রাতে বিয়ের আসরে বসে রয়েছে বর ও কন্যা, ছায়া মন্ডবের একপাশেই বসে রয়েছে কন্যা সম্প্রদাতা যুবক। পুরোহীতের যদিদং হূদয়ং মম তদিদং রিদয় মম মন্ত্র উচ্চরনের মধ্যে দিয়ে চলল বিয়ের অনুষ্ঠানও।এই বিষয়টি কিন্তু আর পাঁচটি বিয়ের নয়, গ্রামবাসীদের সহযোগীতায় ধূমধাম সহকারে মা বাবা হারা অনাথ মেয়ের অভিভাবক হয়ে বিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরাই। বরপক্ষের লোকজনদের আপ্যা়য়ন করা গ্রামবাসীদের কোন ত্রুটি ছিল না ।পাত পেড়ে খেলেন বাকিরাও।
গঙ্গারামপুর পুরসভার 110নম্বর ওয়ার্ডের পুরাণপাড়ার এলাকাবাসীদের কাছ থেকেই যানা গিয়েছে, তাঁদের মাধ্যমিক বিয়ে দেওয়া মা বাবা হারানো অনাথ ওই কন্যার নাম সোমা (২০) বছর।সোমার জন্মের পর থেকেই বাবা হীরেন সিং এর কোন খোঁজ নেই। মা মিঠু (মহন্ত) বহু দিন আগেই মারা গেছেন।সোমার আরেক বোন রুবি সিং ,
ও ভাই নয়ন সিং পরিস্থতির স্বীকার হয়ে গঙ্গারামপুরের কালদিঘী এলাকায় অবস্থিত আলয় অনাথ আশ্রমে থেকেই খেয়ে পড়ে জীবনে বেঁচে থাকার পাশাপাশি পড়াশুনার পাঠ নিচ্ছে ছোটবেলা থেকেই। সোমার বয়স্ক দিদা পুরাণপাড়ার বাসিন্দা কল্পনা মহন্ত অধভাঙ্গা ঘরে যা দিয়ে বৃষ্টি হলেই জল চুইয়ে পরে ,নিজে পরিচারিকার কাজ করে তাঁকে আশ্রয় নিয়েছিল কোন মতে।

পাড়ার সেই অনাথ মেয়েটির কথা চিন্তাভাবনা করে পত্র দেখা শুরু করেন গঙ্গারামপুর পৌরসভা এলাকার ১১নম্বর পুরানপাডা এলাকার মহিলা কমিটির সদস্যা মাম্পি গোস্বামী,শ্যামলী মহন্ত, রেখা মহন্ত, বিজলী মহন্ত,চন্দনা মহন্ত , মুক্তি রাণী কবিরাজদের মত মহিলারা। মহিলাদের সঙ্গে সেই কাজে এগিয়ে আসেন এলাকার পুরুষ বিকাশ দাস, রাজেন সরকার, যুবক শংকর সাহা সহ আরো অনেকেই।প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সোমার বিয়ে ঠিক হয় বেলবাড়ী গুড়িয়া পাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি শ্রমিক পিন্টু রায়ের সঙ্গে। বুধবার ছিল তাঁদের বিয়ের সেই অনুষ্ঠানও।

গঙ্গারামপুর এর পুরানপাড়া শীতলা মন্দির মহিলা কমিটির কোষাধক্ষ মাম্পি গোষামী ও অনাথ মেয়ের বিয়ে দিতে এগিয়ে আসা পুরণপাড়ার পুরুষ উদ্যাগতা বিকাশ বিশ্বাসেরা জানিয়েছেন ,বিয়ের জন্য সমস্ত কিছুই করা হয়েছে। সকলের সহযোগীতা নিয়ে এমন বিয়ের অনুস্টানের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী দিন অন্য সকলেই এমন কারে এগিয়ে আসবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
এলাকার যুবক শঙ্কর সাহা জানালেন ,এমন কাজে সকলের সঙ্গে থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। সমাজে আগমী দিনে এমন কাজে সকলের সঙ্গে থাকব।
সোমার দিদা বয়স্ক কল্পনা মহন্ত কাদো কাদো অবস্থায় জানালেন ,কিছু আত্মীয় ও গ্রামবাসীদের জন্য ওর এমন বিয়ে দেওয়া সম্ভব হল।ধন্যবাদ জানাই সকলকে।
প্রতিবেশীদের এমন সহযোগীতার কথা মনে থাকবে বলে জানালেন মা বাবা হারা অনাথ মেয়ে সোমা। বিয়ে করার পরে খুশি হয়ে সোমার স্বামী পিন্টু রায় জানালেন, সংসার করতেই হবে। তাই এমন একজনকে পেয়ে আমি খুবই খুশি।

সব মিলিয়ে প্রতিবেশীদের এমন উদ্যোগকে যেটা সকলে সাধুবাদ জানিয়েছেন।