দুমাসেই ধসে পড়লো উন্নয়ন! যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চারটি গ্রামের। ক্ষোভে ফুসছে বালুরঘাটের রাধানগর

0
178

দুমাসেই ধসে পড়লো উন্নয়ন! যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চারটি গ্রামের। ক্ষোভে ফুসছে বালুরঘাটের রাধানগর

বালুরঘাট, ২৪ মে —— বৃষ্টি নামলেই গাছপালা সজীব হয়। কিন্তু রাধানগরে বৃষ্টি মানেই আশঙ্কা— কখন যেন ধসে পড়ে আরেকটি ‘নির্মাণ’। শনিবার সকালেও তার ব্যতিক্রম হল না। মাত্র দু’মাস আগে সদ্য উদ্বোধন হওয়া সেতুর সংযোগকারী রাস্তা টানা বৃষ্টির জেরে হু-হু করে বসে যেতে থাকল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছিন্ন হল চারটি গ্রামের যোগাযোগ। এক ধাক্কায় গুটিয়ে গেল হাজার মানুষের দিনযাপন।

বালুরঘাটের জলঘর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর, গুপিনগর, চককাশি ও জলঘরের বাসিন্দাদের একমাত্র বাইরের জগতের সেতুটি পড়ে রইল ‘বিপজ্জনক’ তকমা নিয়ে। বাঁশের ব্যারিকেড বসিয়ে পুলিশ ঘোষণা করল, এ পথে আর চলা যাবে না। অথচ এই সেতুই ছিল কৃষিজীবী মানুষদের হাটে যাওয়া, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পৌঁছনো, অসুস্থদের হাসপাতালে নেওয়ার একমাত্র ভরসা।

জানা গেছে, জলঘর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই রাধানগর গ্রামের উপর দিয়েই বয়ে গেছে কাশিয়া খাড়ি। যে খাড়ির উপর সেতু থাকলেও তার সংযোগকারী রাস্তার অভাব ছিল দীর্ঘদিনের। যে সমস্যায় ভুগছিলেন ওই এলাকার চারটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের যে সমস্যার কথা মাথায় রেখে প্রায় দুমাস আগে জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির উদ্যোগে তৈরি হয় সেতু সংযোগকারী রাস্তাটি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যে রাস্তাটি তৈরির সময় থেকেই তারা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ নিম্নমানের কাজের জেরেই এই দুর্ভোগ।

স্থানীয় বাসিন্দা অমিত মহন্ত বলেন ‘‘দু’মাসের মধ্যে যদি রাস্তা বসে যায়, বুঝতে হবে তার ভিতরে কি রয়েছে।
ফুলমনি পাহান ও অনিল মন্ডলদের আক্ষেপ, ‘‘একটা সেতু হল, সবাই ভেবেছিলাম এবার আমাদের বাঁচাবে। আজ সেই আশাই সব চেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াল।’’

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই ধসকেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ সরকার। তাঁর কথায়, “খাড়ির জলে প্রবল স্রোত। সেটা সামলাতে পারেনি রাস্তার বেস। কাজ চলছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা হবে।”

কিন্তু প্রশ্ন একটাই— প্রকৃতি কি সত্যিই একমাত্র দোষী? নাকি এই নির্মাণ প্রকল্পে ছিল তাড়াহুড়ো, মানহীন সামগ্রী আর দায়হীন তদারকি? স্থানীয়রাও জানেন, প্রতিদিনকার দুর্ভোগে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। কিন্তু তাঁদের মুখে যে একটাই কথা, ‘‘আমরা উন্নয়ন চাই, ভরসা ভাঙা উন্নয়ন নয়।’’

এই মুহূর্তে রাধানগর একটা প্রশ্নচিহ্ন। সেটা শুধু রাস্তার উপরে নয়, গোটা প্রশাসনিক কাঠামোর মাথাতেই ঝুলে রয়েছে। মাটি ধসে পড়েছে— সঙ্গে ধসে পড়েছে বিশ্বাস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here