রায়গঞ্জ:-দীর্ঘ দেড় বছর ধরে চলা লকডাউনে পর্যটক শূণ্য হওয়ায় নিভৃতে বসবাস কুলিক পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখিদের। জনপদশূন্য কুলিক পক্ষীনিবাসে এখন শুধুই হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের কলরব। নেই কোনও পর্যটকদের আনাগোনা নেই কোনও উপদ্রব, শান্তিতে ঘর বেঁধে নানান কলা কৌশলে আপনমনে ব্যস্ত তারা নিজেদের জীবনের কয়েকটা মাস কাটাতে। আয় না হলেও পরিযায়ী পাখীরা যে শান্তিতে নিজস্ব পরিবেশে ভালোই আছে একথা স্বীকার করে নিয়েছে রায়গঞ্জ বন বিভাগের আধিকারিকেরাও।

রায়গঞ্জ শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে কুলিক নদীর ধারে বনাঞ্চলে গড়ে উঠেছে কুলিক পক্ষীনিবাস। ১.৩০ বর্গ কিলোমিটার কুলিক বনাঞ্চল জুড়ে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে গড়ে ওঠা পাখিরায়লয় সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যায় কলেবর বাড়তে থাকে ” রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাসের। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলি থেকে আসা রায়গঞ্জ কুলিক অরণ্যের শাল, শিমুল, শিরীষ, আকাশমনি, খয়ের, অর্জুন গাছে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের আস্তানা এই কুলিক পক্ষীনিবাস এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম পক্ষীনিবাস বলে পরিগনিত হয়। মূলত শামুকখোল পাখির সংখ্যা বেশি থাকলেও নাইট হেরন, ইগ্রেট, করমোরেন্ট, পানকৌড়ি সহ ১৬৪ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল রায়গঞ্জের এই কুলিক পক্ষীনিবাস।

প্রতিবছরই জুন মাসের শেষ ও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পরিযায়ী পাখিরা এই রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাসে এসে ভীর জমায়। সঙ্গী নির্বাচন করে তারা গাছের ডালে ডালে ঘর বাঁধে, প্রজনণের মাধ্যমে ডিম ফুটিয়ে শাবকের জন্ম দেয়। এরপর শুরু হয় শাবকদের উড়তে শেখানোর প্রশিক্ষন। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস মূলত এই সময় তাদের ভরা সংসার। এরপর শাবকদের বড় করে তোলা উড়তে শেখার প্রশিক্ষণ দেওয়া। নানান ব্যাস্ততায় কাটে এদের দিন। আর এদের এই কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে কুলিক পক্ষীনিবাস। আবার শীত পড়তেই ডিসেম্বর মাস নাগাদ এইসব পরিযায়ী পাখিরা ফিরে যাবে যেখান থেকে তারা আসে।

প্রায় দেড় বছর সময়কাল ধরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলছে লকডাউন। বন্ধ রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কুলিক পক্ষীনিবাস। ফলে নেই পর্যটকদের আনাগোনা, নেই কোনও উপদ্রপ। তার উপর লকডাউনে পরিবেশ দূষণ কম হওয়ায় নিভৃতে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছে পরিযায়ী পাখিরা। ফলে আগের তুলনায় বাড়ছে পাখির সংখ্যাও। রায়গঞ্জ বন বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় আধিকারিক সিতাংশু কুমার গুপ্ত জানিয়েছেন পর্যটক শূন্য হওয়ায় উপদ্রব কম থাকায় পাখিরা খুব ভালো রয়েছে। পাশাপাশি দূষণের পরিমানও কমে যাওয়ায় কুলিক পক্ষীনিবাসে পাখির সংখ্যার কলেবরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা চলতি বছরে কুলিক পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।