দণ্ডি কাটা কান্ডে অধরা মূল অভিযুক্ত! প্রতিবাদে আদিবাসীদের ডাকা ১২ ঘন্টার বনধ কে ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড বালুরঘাটে। নাস্তানুবুদ অবস্থা সাধারণ মানুষের।

0
447

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২২ মে —- দণ্ডি কাটা কান্ডে মূল অভিযুক্তর গ্রেফতারি নিয়ে ফের হয়রানির মুখে সাধারণ মানুষ। আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের ডাকা ১২ ঘন্টা বনধ কে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বালুরঘাট। বনধ সমর্থনকারীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে কাটলো অসুস্থ রোগী বোঝাই টোটোর টায়ার। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ স্থানীয়দের। আদিবাসী যুবকদের পাকড়াও করে বেধড়ক মারধর বাসিন্দাদের। বিক্ষোভ চলে পুলিশকে ঘিরেও। সোমবার দুপুরে এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় বালুরঘাট শহরের সাধনা মোড় এলাকায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এলাকায় ছুটে আসে বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাজা ও ডিএসপি সদর সোমনাথ ঝা। নামানো হয় কমব্যাট ফোর্সও।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অপরাধে তপনের গোফানগর এলাকার চার আদিবাসী মহিলাকে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা দণ্ডি কাটাবার অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর পুত্রবধূ তথা তৃণমূলের প্রাক্তন মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। যে ঘটনার পর তাকে শুধুমাত্র দলের পদ থেকে সরানোয় নয় বালুরঘাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরানো হয় প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখনও পর্যন্ত  তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ প্রশাসন। যার পেছনে  প্রভাবশালী তকমাকেই সামনে এনেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, প্রাক্তন মন্ত্রীর পুত্রবধূ ও স্বামী সরকারি আইনজীবী হওয়ায় এখনও তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আদিবাসী মহিলাদের সাথে মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী, এমন অভিযোগে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনগুলি। বেশ কয়েকদিন আগে সেইসব সংগঠনের ডাকা ১২ ঘন্টা বনধে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল বাড়ি থেকে বেরোনো পথচলতি সমস্ত মানুষকেই। সোমবার প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে গ্রেফতারের দাবিতে ডাকা আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের ১২ ঘন্টা বনধে ফের নাস্তানুবুদ হতে হয় জরুরি কাজে বেরোনো পথচলতি মানুষদের। যার জেরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় দণ্ডি কান্ডে মূল অভিযুক্তর বাড়ি থেকে সামান্য দূরে শহরের সাধনা মোড় এলাকায়। জানা যায়, এদিন দুপুরে হিলির তিওড়ের ফেরুসা এলাকার বাসিন্দা তথা পেশায় টোটোচালক বিকাশ লাহা তার টোটোতে করে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যে সময় শহরের সাধনা মোড় এলাকায় তার টোটো আটকে দেয় বেশকিছু সশস্ত্র আদিবাসীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কেটে দেওয়া হয় টোটোর দুটি টায়ার। হুশিয়ারি দেওয়া হয় তাকেও। যা চাক্ষুষ করেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিবাদে শহরের সাধনা মোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন বাসিন্দারা। চলে বিক্ষোভও। ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় ছুটে আসলে তাদেরও ঘেরাও করে চলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। যাকে ঘিরে তুমুল  উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। এরই মাঝে মোটর বাইকে চেপে বেশকিছু সশস্ত্র আদিবাসীরা ছুটে আসতেই মারমুখী হয়ে ওঠে উত্তেজিত বাসিন্দারা। পুলিশের হাত থেকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে এক আদিবাসী  যুবককে বেধড়ক মারধরও করেন উত্তেজিতরা। যে ঘটনাকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় বালুরঘাট শহরের সাধনা মোড় এলাকায়। ঘটনার পরে তিন আদিবাসী যুবককে আটক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন বালুরঘাট থানার আইসি ও ডিএসপি। দণ্ডি কাটা কান্ডের ঘটনা প্রায় দুমাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত করেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু তারপরেও অধরা রয়েছে মূল অভিযুক্ত। চলছে লাগাতার বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে বনধের ঘটনা। আর যার জেরে  সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি ও নাস্তানুবুদ হতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করবার কারণে কেন রোজ ভোগান্তির মুখে পড়বে সাধারণ মানুষ ? সেই প্রশ্নই এখন জোড়ালো হচ্ছে বালুরঘাট শহর সহ গোটা জেলাজুড়ে।

টোটো চালক বিকাশ লাহা বলেন, এদিন অসুস্থ রোগীকে টোটো করে নিয়ে যাওয়ার সময় সশস্ত্র আদিবাসীরা তার টোটো আটকে দেয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেওয়া হয় তার টোটোর দুটি টায়ার। প্রাণভিক্ষা চেয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। 

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তথা ব্যবসায়ী সুবল ঘোষ বলেন, অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় নিরীহ টোটো চালকের  টায়ার ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দিয়েছে আদিবাসীরা। এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না হলে তারা ব্যবসায়ীরা লাগাতার ধর্মঘটে নামবেন। 

আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের জেলা নেতা বিক্রম মুরমু বলেন, তাদের আন্দোলন চলছিল শহরের হিলি মোড়ে। এদিকে তাদের কোন আন্দোলন ছিল না। দুস্কৃতিরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা পুলিশ-প্রশাসনকে বলবেন এ ঘটনার সাথে জড়িত উপযুক্তদের পাকড়াও করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।

ডিএসপি সদর সোমনাথ ঝা জানিয়েছেন, রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় টোটো চালকের টায়ার কেটে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় সিসিটিভি রয়েছে। তারা ফুটেজ দেখে তদন্তে নেমেছেন। একইসাথে এই ঘটনায় তিনজনকে আটকও করা হয়েছে।  

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here