ত্রিপলের নিচে তিন যুগের কান্না!

0
171

ত্রিপলের নিচে তিন যুগের কান্না! তপনের এনায়েতপুরে আদিবাসী বৃদ্ধার একাকীত্বে কাঁদছে মানবতা,স্টার সংবাদে সেই খবর প্রকাশ হতেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন দাঁড়ালো পাশে,রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে ছুটে এলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, তপন ব্লকের বিডিও,আশ্বাস দিলেন পাকা ঘরের,খাবারের
শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট, ৭ জুন —রাত নামলেই ঘুমিয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। কিন্তু ছেঁড়া ত্রিপলের নিচে তখনও জেগে থাকেন মুখী সরেন।অপেক্ষা করেন আর এক ভোরের।যে ভোরও বয়ে আনে শুধুই ক্ষুধা,অনিশ্চয়তা আর অসম্মানের দীর্ঘশ্বাস।দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের ৫নম্বর দ্বীপখন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের এনায়েতপুর গ্রামে আজও তিন যুগ ধরে মানবিকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বছর ষাটের এক আদিবাসী বৃদ্ধা।স্বামী নেই,সন্তান নেই,পরিজন তো দূর অস্ত।ছোট্ট একটুকরো জমিতে জোগাড় করা ছেঁড়া ত্রিপলের নিচেই তার বাস।নেই চুলা,নেই ছাই, নেই সঞ্চয়। যেদিন পাড়ায় ঘুরে খাবার জোটে,সেদিন খেতে পারেন।না হলে? দিনটা কেটে যায় না খেয়ে।গত ৪জুন স্টার সংবাদ নিউজ চ্যানেলে বৃদ্ধা আদিবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়।সেদিন তিনি কাঁপা গলায় বলেছিলেন,“পেটের ভাত বুঝি, কাগজপত্রের রাজনীতি বুঝি না বাপু।মাথার উপর একখানি ছাদ চাই, যাতে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে না মরি।” সংবাদ প্রকাশ হবার পরে এখন মুখী সরেন স্টার সংবাদকে ধন্যবাদ দিলেন ,আর জানালেন,”স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আশ্বাস দিয়েছে পাশে থাকার। ব্লকের বিডিও এসে আশ্বাস দিয়েছেন এবার ঘরো পাব, মুখে দু ফোঁটা আহারও জুটবে।”
ওই আদিবাসী মহিলার স্বামীর নাম জোহান সরেন।সে ১৩বছর আগে মারা গেছে।তার কোন ছেলে মেয়ে নেই। মুখীমনি সরেনের বাবা মঙ্গল সরেন,মা আকাশী সরেন।বাবার বাড়িতে তার বিয়ে হয়েছিল বহুদিন আগে।সেই বাবার বাড়ির কিছুটা জায়গাতে আগে মাটির বাড়ি ছিল যা বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে বহুদিন আগেই বলে এলাকাবাসীরা জানান।মুখী সরেনের কথায়,তার ভোটার কার্ড ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত,আধার কার্ড নেই।রেশন কার্ড ছিল,টাও বহুদিন আগে এলাকারই এক বাসিন্দ রঞ্জিত বেসরা নিয়ে গেছে রেশনের চাল তুলে দেবেন বলে। ওই পর্যন্তই, পরে তারও দেখা পাওয়া যায়নি বহুদিন হলেও। মুখী আরো জানান,ভোটার কার্ডে নাম ছিল ২০০৮ সালে,পরে তার নাম কেটে যায়।আধার কার্ড তৈরি হয়নি তার নামে।এখন চেয়ে চিনতে চলে তার। মুখীকে শৌচকর্ম সারতে যেতে হয় মাঠে, জল আনতে পাশের সরকারি টিউবওয়েলে। সেখানেও এখন জল আসে না। মুখী সরেনের জীবনে জল যেমন নেই, তেমনই নেই জীবনের প্রতি কোনও স্থিরতা। শুধু কষ্টের স্রোত বইছে অবিরাম। মুখীর এলাকাবাসী রাম হাসদা বলেন,”বাবার বাড়িতে বিয়ে হয় তার।আগে তার নামে ভোটার কার্ড ছিল,রেশন কার্ড ছিল। বাবার বাড়ির জায়গাতেই বর্তমানে অন্যের কাছে চেয়ে একটি ত্রিপল যোগাড় করে ওই সে বহুদিন সেখানেই থাকছে।চেয়ে চিনতে খাবার খেয়ে দিন যাপন করছে।ভোটের সময় যদিও নেতাদের আশ্বাস মেলে কিন্তু ভোট মিটে গেলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে দাবি তার।সংবাদে প্রকাশ হতেই পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রশাসন, এবার তার দুঃখ খুজবেই।”
তপন ব্লকের উল্লেখযোগ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা “সাহায্যের হাতের” সম্পাদক অশোক প্রামাণিক বলেন,“ওই দৃশ্য দেখে চোখে জল আসে।তিন যুগ ধরে একা একজন মানুষ এভাবে বেঁচে আছেন,এটা আমাদের সমাজের জন্য দারুন লজ্জার।স্টার সংবাদে খবর প্রকাশ হতেই মানবিকতার কারণেই আমরা প্রথমে তার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছি।শুনলাম প্রশাসন সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে ভালো লাগলো।এমন দুস্থ বৃদ্ধার পাশে তারা থাকবেন এবং সকলকে এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন।”
তপন ব্লকের ৫নম্বর দ্বীপখন্ডা পঞ্চায়েত প্রধান ইমতিয়াজ সরকার জানিয়েছেন,”ব্লকের বিডিও সাহেব কয়েক দিনের মধ্যে ওনাকে স্থায়ী ঘর তৈরি করার কথা বলে দিয়েছেন আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।উনার খাবারে ব্যবস্থাও গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে করা হবে।”
তপন ব্লকের বিডিও তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন,“সংবাদে বিষয়টি জানতে পেরেছি ,বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।দ্রুত ওই আদিবাসী বৃদ্ধা মহিলাকে ঘর সহ সব ধরনের সাহায্য করা হবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here