তাঁতের টানা-পড়েনে নির্মলের অন্য জীবন দর্শন গঙ্গারামপুরের ঠাঙ্গাপাড়া, দেখুন বিশেষ প্রতিবেদন
শীতল চক্রবর্তী ৩ ডিসেম্বর বালুরঘাট দক্ষিণ দিনাজপুর: জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন,সেই সঙ্গে মূক-বধিরও।এত রকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ছোটবেলাতেই। ভালোবাসার খোঁজ দিয়েছিল ‘টানা-পড়েন’।হাতেবোনা তাঁতে সুতোর কাউন্টে ডুবে গিয়ে মাত দিয়েছিলেন নিজের সবরকম অসহায়তাকে।একসময়ে হাতেবোনা তাঁতের বদলে অভ্যস্ত হয়েছেন পাওয়ারলুমেও।ভালোবাসা কমেনি একটুও।
গত ২৭বছর ধরে তাঁত বুনে চলেছেন নির্মল বিশ্বাস। নির্মলের কাজ দেখতে হলে যেতে হবে তাঁর দুয়ারে। বৃক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের বেলবাড়ি ৩(২)গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠ্যাঙ্গাপাড়ার বোয়ালদহের
বাসিন্দা ননীবালা বিশ্বাসের তিন ছেলের মধ্যে নির্মল সবচেয়ে ছোট।বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় ছোট্ট নির্মলকে কখনও স্কুলে ভর্তি করেননি তাঁর অভিভাবকরা। প্রত্যন্ত এলাকায় স্পেশ্যাল স্কুলই বা কোথায়।পুরো পরিবারেরই সংসার চলে তাঁত বুনে।বাড়িতে বেশ কয়েকটি তাঁত রয়েছে। নিরক্ষর নির্মল কিন্তু তাঁতের টানা-পড়েনেই (সুতোর লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি বুনন) খুঁজে পেয়েছেন বাঁচার ছন্দ।
নির্মলের দুই দাদা উজ্জ্বল ও নারায়ণ ভাইকে নিয়ে ভীষণ গর্বিত। উজ্জ্বল বলেন, ‘ভাই তখন বেশ ছোট। আমরা কাপড় বুনতাম আর ও চোখে দেখতে না-পেলেও সেখানে আগ্রহ নিয়ে বসে থাকত। খুব অল্প সময়েই সুতোয় নলি ভরানো, ডাম চালানো শিখে নিয়ে কাপড় বুনতে শুরু করে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, কাপড় বুনতে গিয়ে যদি কোনও সুতো ছিঁড়ে যায়, নির্মল মুহূর্তের মধ্যে তা বুঝে ফেলে। নিজেই সেই সুতো জোড়া লাগিয়ে ফের কাপড় বুনতে শুরু করে দেয়।’ দুই দাদা বললেন, ‘কাপড় বোনা ওর কাছে নেশার মতো। এত রকম সমস্যা নিয়েও ভাই যে কী ভাবে কাপড় বোনে, দেখলে অবাক হতে হয়। তবে কোনও দিন সরকারি সাহায্য মেলেনি।’
দাদাদের কথার মাঝেই ইশারা করতে শুরু করলেন নির্মল।পাশ থেকে মা ননীবালা বলে উঠলেন, ‘ছেলে বলতে চাইছে, আমিও পারি অন্যদের মতো। আর সেটা স্রেফ মনের জোরেই সম্ভব হয়েছে।’ নির্মলের এক সহকর্মী তাপস পাল ও আরো একজন বললেন, ‘ও অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। সরকারি সাহায্য পেলে খুব উপকার হয়।’
নির্মল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই বেলবাড়ি ৩(২)পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় মন্ডল বলেন,”গঙ্গারামপুরের দৃষ্টিহীন ওই তাঁতির সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করা হবে।’
গঙ্গারামপুরের বিডিও অর্পিতা ঘোষালও বলেন, ‘কী ভাবে নির্মলকে সাহায্যে করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।”

















