তপনে গায়েব আস্ত রাস্তা! আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের ১৫ লক্ষ টাকার রাস্তা গিলে খেল ঠিকাদারি ভূত
বালুরঘাট, ২২ এপ্রিল —— তপনের পাহাড়পুর যেন বাস্তবের ‘জাদুর শহর’। কাগজে কলমে তৈরি হয়েছে ৪০০ মিটার ঢালাই রাস্তা। বাজেট— আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের বরাদ্দে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু বাস্তবে? মাপজোখ করে দেখা যাচ্ছে, মাটি ছুঁয়ে আছে মাত্র ২৩০ মিটার। বাকিটা? নেই! যেন গিলে খেল কোনো অদৃশ্য শক্তি— কিংবা কোনো দুষ্টু ঠিকাদার।
গ্রামের মানুষ বলছেন, “রাস্তা চুরি হয়েছে!” কথাটি শুনে প্রথমে অবাক লাগলেও বাস্তব ঘটনাটা তার চেয়েও ভয়াবহ। আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়পুরের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৪০০ মিটার পাকা রাস্তা। কাজের বরাত পায় ওয়েস্ট বেঙ্গল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন লিমিটেড। বছরের গোড়ায় কাজ শুরু হয়, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নির্মাণ বন্ধ। দেখা যাচ্ছে, মাত্র ২৩০ মিটার ঢালাই করে হঠাৎ কার্যত উধাও ঠিকাদার।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীপদ বর্মন ও মান্তু দত্তরা বলেন, আস্ত রাস্তা চুরি হয়েছে তাদের গ্রামে। আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের বরাদ্দ অর্থে ১৭০ মিটার রাস্তা গ্রামে তৈরি না করেই চম্পট দিয়েছে কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা। যে ঘটনা জানিয়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তারা। তাদের একটাই দাবি, ১৭০ মিটার রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হোক তাদের গ্রামে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন তপন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণা বর্মনও। তিনি জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পর বিডিওকে নিয়ে এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছি। বাস্তব পরিস্থিতি দেখে আমরাও স্তব্ধ। ঠিকাদার সংস্থা জানিয়েছে, তারা নাকি রাস্তার জায়গা খুঁজে পায়নি! এই যুক্তি হাস্যকর। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে গ্রামবাসীরা জেলা প্রশাসন, বিডিও সহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তবুও নির্মাণ থমকে আছে। এখন তাঁদের একটাই দাবি— দ্রুত নির্মাণ শেষ হোক, আর অভিযুক্তদের শাস্তি হোক।
তপনের এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, শুধু বরাদ্দে উন্নয়ন হয় না। দরকার তদারকি, দায়বদ্ধতা আর জবাবদিহি। না হলে উন্নয়নের নামে এমন ‘চুরি’ যে কোনো দিন আরও বড় আকারে ফিরতে পারে।