ডাক্তার নেই, নার্সের কেরামতিতেই চলছে আস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্র। আতঙ্কিত হরিরামপুরের গোকর্ন এলাকার বাসিন্দারা
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৮ অক্টোবর ————– ডাক্তারের দেখা নেই, এম বি বি এসের ভূমিকায় এক কর্তব্যরত নার্স। শুনতে অবাক মনে হলেও মাসের পর মাস এমন অবস্থাতেই চলছে এক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। আর যার জেরে একপ্রকার আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন এলাকার বাসিন্দারা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি দক্ষিন দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের গোকর্ন এলাকার। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
জানা গেছে হরিরামপুর ব্লকের গোকর্ণ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ধুমতলা এলাকায় রয়েছে গোকর্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এলাকার গোকর্ণ, ধুমতলা , ক্ষীর পুকুর , কলাইবাড়ি, হাড়িপুকুর ,, দুর্লভপুর, চিতা পুকুর , লহুচর , বুঝনি পুকুর, চন্ডিপুর, মুস্কি পুর, বড়গ্রাম, বেজাহার, সহ প্রায় ২০ থেকে ২২টি গ্রামের মানুষজনের সুবিধার্থে বছর দুয়েক আগে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর গড়ে তোলে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। প্রতিদিন প্রায় দেড়শো থেকে দুশো মানুষের পরিষেবা দিতে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখা হয় একজন চিকিৎসক, একজন নার্স, ফার্মাসিস্ট ও একজন গ্রুপডির কর্মী। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালুর প্রথম দিকে এসব ঠিকঠাক থাকলেও আচমকা গায়েব হয়ে যায় ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক। আর যার কারনে ওই এলাকার কুড়ি থেকে বাইশটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র চিকিৎসার ভরসা এখন ওই নার্স। যিনি এম বি বি এস ডিগ্রিধারী চিকিৎসককেও যেন হার মানাচ্ছেন। রোগী দেখা থেকে শুরু করে ওষুধ দেওয়া সবই করছেন তিনি, অভিযোগ গ্রামবাসীদের। জ্বর, সর্দি কাশি তো দুরের কথা হার্টের রোগী, হাড়ের চিকিৎসা সবকিছুরই ওষুধ দিচ্ছেন ওই নার্স, এমনটাও অভিযোগ গ্রামবাসীদের। চিকিৎসক ছাড়া এসব রোগের ওষুধ কি একজন নার্স দিতে পারেন? এমন প্রশ্ন যেন এখন গোটা গোকর্ন গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়েই। তবে উপায় না থাকায় কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই সেই ওষুধ খাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার আতঙ্কিত বোধ করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ছুটছেন হরিরামপুরে। যদিও গ্রামবাসীদের এমন যুক্তি মানতে নারাজ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। তার কথায় খাতা কলমে একজন চিকিৎসক রয়েছেন ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য। সপ্তাহে তিনদিন ওই চিকিৎসক সেখানে যান বলেও দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত নার্স ও গ্রামবাসীদের কথায় স্পষ্ট যে, ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্র মাসের পর মাস চিকিৎসক ছাড়াই চলছে। সরকারি খাতা কলমে চিকিৎসকের হাজিরা থাকলেও কি কারনে ওই চিকিৎসক মাসের পর মাস গায়েব রয়েছেন তা যেন এক অজানা প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে গ্রাম বাসীদের কাছে।
হরিরামপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় ঘোষ বলেন, তিনদিন করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক থাকবার নির্দেশ রয়েছে। বয়স্কজনিত কারনে কিছু সমস্যা রয়েছে তার। তবে তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছেন এমনটাই জানা রয়েছে তার।
কর্তব্যরত নার্স মনীষা গুহ বলেন, ডাক্তার এখানে আছে কিন্তু তিনি আসেন না। ডাক্তারের জন্য রোগীদের তারা ফেরাতে পারেন না। আর সেইজন্যই তিনি ওষুধ দিচ্ছেন। তিনি একজন রেজিস্ট্রার নার্স। প্রেসক্রিপশন করার এক্তিয়ার না থাকলেও ওষুধ দিতে পারেন।
হাসেম আলী, জাহেরা বিবি ও আমিরুল ইসলামরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। নার্স দিদিমনিই রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছে সব অসুখের। ঘটনা নিয়ে তারা যথেষ্টই আতঙ্কিত। তারা চান স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার দিয়েই তাদের চিকিৎসা হোক।