জিরো ব্যালেন্স একাউন্টের ফাঁদ! বিনামূল্যে একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন!

0
61

জিরো ব্যালেন্স একাউন্টের ফাঁদ! বিনামূল্যে একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন! সিমলা আদালতের নোটিশে ঘুম উড়ল বালুরঘাটের দিনমজুর পরিবারের

বালুরঘাট, ২১ জুলাই —– বিনামূল্যে ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলে দেওয়ার টোপ! আর তাতেই সর্বনাশ। জিরো ব্যালেন্সের একাউন্টে লক্ষাধিক টাকার লেনদেন! সুদূর সিমলা আদালতের নোটিশে হকচকিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের এক আদিবাসী কলেজ পড়ুয়া ও তার দিনমজুর পরিবার। সোমবার ঘটনা জানাজানি হতেই তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বালুরঘাটের রাজুয়া গ্রামে।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে গ্রাম থেকে বালুরঘাট শহরে পড়তে এসেছিল দিনমজুর অমল বাস্কের ছেলে সুব্রত বাস্কে। বালুরঘাট কলেজের ছাত্র। সংসারের হাল মেরামতের একমাত্র ভরসা ওই পড়ুয়ার ভবিষ্যত। চকভৃগুতে একটি ভাড়া বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করত সে। পাশের ঘরে থাকতেন রাজমিস্ত্রী মাইকেল টুডু। সেই পরিচয় থেকেই ফাঁদ। বছর খানেক আগে কলেজ ছাত্র সুব্রতর আচমকা প্রয়োজন পড়ে একটি ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলার। কিন্তু সেসময় তার হাতে টাকা না থাকায় কিছুটা বিপাকে পড়ে সুব্রত। যার সুযোগ নিয়ে চককাশী এলাকার একটি সিএসপি সেন্টার থেকে জিরো ব্যালেন্সের একাউন্ট খুলে ‘উদার’ হয়ে এগিয়ে আসে মাইকেল। কিন্তু এখানেই শুরু সর্বনাশের গল্প। একাউন্ট খুললেও সুব্রত কোনওদিন হাতে পায়নি পাশবই বা এটিএম। চাইলেও তাকে দেয়নি মাইকেল। আর তার মধ্যেই ঘটে যায় গোপন লেনদেনের কারসাজি। এরপরেই আচমকা ব্যাঙ্কের তরফে সাবধানবার্তা— একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন চলছে! তারপরেই আসে সিমলা আদালতের নোটিশ, হাজিরা দিতে হবে ২৬শে জুলাই।তারিখ এগোচ্ছে, আতঙ্ক বাড়ছে।

সুব্রতর চোখ কপালে! হতভম্ব পরিবারও। এই দুঃস্বপ্নের উৎস যে নিজেরই নামের একাউন্ট, তা ভেবে রাতের ঘুম উড়েছে সকলের। সুব্রতর সাফ কথা, ‘‘আমি কোনও লেনদেন করিনি। একাউন্টের এটিএমও তো পাইনি। তবুও কিভাবে লক্ষাধিক টাকা লেনদেন হল, বুঝতে পারছি না।’’

সুব্রতের বাবা অমল বাস্কে বলেন, ‘‘দিনমজুরির লোক আমরা। এত কিছু বুঝি না। পড়ার জন্য ছেলেকে শহরে পাঠিয়েছিলাম। এখন আইন-আদালত চিঠি পাঠাচ্ছে। মাথায় বাজ পড়েছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’

সোমবার সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বাস্কে পরিবার। পুলিশ সূত্রে খবর, জেলায় ক্রমশ বাড়ছে ব্যাঙ্ক একাউন্ট বেচাকেনার চক্র। একবার একাউন্ট হাতছাড়া হলেই তার অপব্যবহার রোধ করা প্রায় অসম্ভব।
ডিএসপি সদর বিক্রম প্রসাদ জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক একাউন্ট বিক্রি করবার প্রবণতা জেলায় বাড়ছে। আর এর মাধ্যমেই ঘটছে সাইবার প্রতারণা। এনিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যে বেশকিছু স্কুলে তারা সচেতনতা শিবির করেছেন। এবারে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের জন্য পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বাড়াবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু ততদিনে কি রক্ষা মিলবে সুব্রতর? ছেলের মাথার উপর আদালতের সমন, পরিবার সর্বস্বান্ত হওয়ার ভয়। এক মুঠো স্বপ্ন আর বিনামূল্যের লোভ যে কত বড় সর্বনাশের মুখে ফেলতে পারে, সুব্রতর দুঃসহ অভিজ্ঞতা তার যেন জ্বলন্ত নজির।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here