চোষক পোকার দাপটে ধান শূন্য জমি! ঋণের দুশ্চিন্তায় বালুরঘাটের দেবীপুরে কৃষকের মর্মান্তিক আত্মহত্যা – শোকের আবহ জেলাজুড়ে

0
48

চোষক পোকার দাপটে ধান শূন্য জমি! ঋণের দুশ্চিন্তায় বালুরঘাটের দেবীপুরে কৃষকের মর্মান্তিক আত্মহত্যা – শোকের আবহ জেলাজুড়ে

বালুরঘাট, ৮ ডিসেম্বর —— ফসলহানির হতাশা, মাথায় চড়া ঋণের বোঝা—শেষ পর্যন্ত সেই চাপই প্রাণ কেড়ে নিল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের দেবীপুর গ্রামের কৃষক কমল মন্ডলের (৬৮)। রবিবার গভীর রাতে নিজের শোবার ঘরে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয় তার দেহ। সোমবার সকালে ঘটনার খবর সামনে আসতেই পুরো এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া, তৈরি হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য।

পরিবার ও প্রতিবেশীদের বর্ণনা অনুযায়ী এ যেন কৃষকজীবনের এক নির্মম বাস্তবতার ছবি। নিজের জমি না থাকায় অন্যের পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন কমল। হিসেব ছিল—মোটামুটি সত্তর মন ধান উঠবে। সেই ধান বিক্রির টাকায় সার বিক্রেতার বকেয়া, লিজের টাকা—সবই মিটিয়ে ফেলবেন তিনি। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথে হানা দেয় চোষক পোকার ভয়াবহ দাপট। জমির বেশিরভাগ ধানই নষ্ট হয়ে যায়। শেষে মাঠ থেকে যখন মাত্র নয় মন ধান ওঠে, তখন কার্যত ভেঙে পড়েন কমল।

পরিবারের দাবি—গত কয়েকদিন ধরে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল তার। চুপচাপ, অস্থির, চিন্তায় ডুবে থাকা—অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করছিলেন সকলে। রবিবার গভীর রাতে সবার অগোচরে শোবার ঘরে গিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। স্থানীয় খাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। যে খবর পেয়ে সোমবার সকালে দেবীপুরে পৌঁছে যায় কৃষি দপ্তর। আধিকারিক তনয় সাহা জানান, “পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। পুরো ঘটনায় আলাদা তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন মন্ডল বলেন, “অন্যের জমিতে চাষ করতে গিয়ে প্রচুর ঋণের বোঝা চেপেছিল কমলের কাধে। তার উপর ফসলহানি… সব মিলিয়েই মানসিক চাপে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমলবাবু।”

দেবীপুরের মানুষদের কথায়—একজন পরিশ্রমী কৃষকের জীবন শেষ হয়ে গেল কীটনাশক ব্যর্থতা আর ঋণের তীব্র চাপে। কৃষকের মৃত্যু যেন আবারও সামনে এনে দিল—ফসলহানির আঘাত শুধু জমিতেই নয়, আঘাত হানে পুরো পরিবারে, পুরো সমাজে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here