চার হাজার টাকার ভাতাতেই পাঁচ প্রাণের বাঁচার লড়াই বালুরঘাটে! সীমান্তঘেঁষা পুর্ব চকরামে মানবিকতার শেষ আশ্রয় মুখ্যমন্ত্রীর জনদরদি প্রকল্প
বালুরঘাট, ৮ ডিসেম্বর —– বাংলাদেশ সীমান্তকে প্রায় ছুঁয়ে থাকা বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব চকরাম। গ্রামের এক কোণে কাদামাটি-লেপা ছোট্ট ভাঙা ঘর। বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না, এই আধভাঙা ঘরেই লুকিয়ে আছে এক পরিবারের রুদ্ধশ্বাস জীবনযুদ্ধ—যাদের বেঁচে থাকার শেষ ভরসা মুখ্যমন্ত্রীর তিনটি জনদরদি প্রকল্পের মাসিক চার হাজার টাকা।
পাঁচজনের এই পরিবারে তিনজনই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। পরিবারের প্রধান, বৃদ্ধা সুর্যবালা বর্মন—চোখে-মুখে বয়সের রেখা, হাতে কাঁপুনি, তবুও তিনিই এ পরিবারের ভরসা। বিধবা ভাতা ও লক্ষ্মীর ভান্ডারের দুই হাজার টাকা তাঁর মাসিক প্রাপ্তি। বাকিটা ভরসা তাঁর অক্ষম ছেলে মদন বর্মন এবং পুত্রবধূ বিউটি বর্মনের প্রতিবন্ধী ভাতা। যারা দু’জনেই প্রায় একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী।তাদের দু’জনের মিলিয়ে আরও দুই হাজার টাকা জোগাড় হয় সেই সংসারে।
এই চার হাজার টাকার সাহায্য না থাকলে তাদের জীবন কীভাবে চলবে—ভাবতেই শিউরে ওঠেন প্রতিবেশীরাও। ভাঙা ঘরের ভিতর রয়েছে দুই শিশুও। উনুনের আগুন জ্বলার নিশ্চয়তা নেই পরিবারটিতে, খাবারের ব্যাগে কতটা চাল আছে তাও জানা নেই, পরদিনের কী হবে—তারও ঠিক নেই। শুধু নিশ্চিত একটাই—মাসের শুরুতে সরকারি ভাতা না এলে উপবাস ছাড়া পথ থাকত না তাদের।
বিউটি বর্মনের কণ্ঠে অসহায়তার প্রতিধ্বনি। তিনি বলেন “আমাদের কেউই রোজগার করতে পারি না। এই ভাতার টাকাতেই কোনওমতে বেঁচে আছি। দু’দিন যদি ভাতা না আসে, কী খাব সেটা ভেবেই ভয় লাগে।”
সেই একই যন্ত্রণা শোনা যায় বৃদ্ধা সুর্যবালা বর্মনের গলায়— তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাতা না থাকলে আমরা বাঁচতাম না। সংসারে উপার্জনকারী কেউ নেই। ভাতার টাকাতেই আমাদের দুনিয়া।
প্রতিবেশী গোপাল মণ্ডল ও বিনোন্দন বর্মনরা বলেন, এটা পরিবার নয়—এ যেন হাড়হিম করা সংগ্রামের গল্প। তিনজন অক্ষম মানুষ আর দুইটি শিশু—অসাধারণ কষ্টে দিন কাটে। মুখ্যমন্ত্রীর জনদরদি প্রকল্পই এদের একমাত্র ভরসা। তারা চান ওই পরিবারটিতে আরো বেশি করে মিলুক সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প।
সীমান্তঘেঁষা একটি গ্রামের অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে থাকা এই মাটির ঘর আজ যেন সরকারিভাবে ঘোষিত মানবিকতার এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। চার হাজার টাকার ক্ষীণ আলোয় টিকে থাকা পাঁচটি প্রাণ—প্রমাণ করে দেয় সরকারী সহায়তার প্রয়োজন কতটা গভীর, কতটা জরুরি। মুখ্যমন্ত্রীর জনদরদি প্রকল্প তাদের শুধু টাকা দেয়নি—দিয়েছে বেঁচে থাকার সাহস, আশ্রয় আর মানবতার স্পষ্টতম উজ্জ্বল দাগ।



















