চারশো বছরের পুরানো ভূপালপুর রাজবাড়ির পুজোও এবার করোনার কোপে জাঁকজমকহীন ঘটপূজোয় সারতে চলেছেন

0
710

উত্তর দিনাজপুর:—চারশো বছরের পুরানো ভূপালপুর রাজবাড়ির পুজোও এবার করোনার কোপে জাঁকজমকহীন ঘটপূজোয় সারতে চলেছেন রাজা ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরীর বংশধরেরা। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের দূর্গাপুরে ভূপালপুর জমিদার বাড়ি এলাকার মানুষদের কাছে তথাকথিত রাজবাড়ির পূজো নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে একটা বাড়তি উন্মাদনা থাকে। কিন্তু করোনার আবহে হাজার হাজার প্রজা থুড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের ভীড় এড়াতে এবার ঘটপূজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজবাড়ির বংশধরেরা।

কথিত আছে, মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমল থেকেই এই বংশের দূর্গাপুজার প্রচলন হয়েছিল। পরবর্তীতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী, ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরী রাজ পরিবারের বংশধরের হাত ধরে এখানে দেবী পূজিতা হন। ইতিহাসের পথ বেয়ে আজও দূর্গাপুর রাজবাড়িতে পূজো করে আসছেন তাঁদের বংশধরেরা। দেবী দূর্গা কয়েকশো বছরের প্রাচীনত্বের গন্ধ মেখে নিয়ম নিষ্ঠার সাথে পূজো পেয়ে থাকেন এই রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দূর্গা দালানে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছুটা পুজোর পদ্ধতির পরিবর্তন ঘট্রছে রাজবাড়ির পূজোয়। আগে মহালয়ার দিন থেকেই দূর্গার আরাধনায় মেতে উঠতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং এতদঅঞ্চলের বাসিন্দারা। জোড়া মোষ ও পাঠাবলীর মাধ্যমে আগে দেবীর বোধন হত মহালয়াতেই। এখন মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধনের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলি প্রথা। তবে পূজোর নিয়ম নিষ্টা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। এখানে অসুরের গায়ের রঙ হয় ঘন সবুজ আর দেবী দূর্গার মাথার উপরে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অধিষ্ঠান থাকে। রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর অভিষেক রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের আদি বাড়ি ছিল ইটাহারের চূড়ামন এলাকায়। সেখানেই দেবী দূর্গার আরাধনা হত। মহানন্দা নদীর করাল গ্রাসে রাজবাড়ি ও রাজ্যপাট চলে যায় নদীগর্ভে। তারপর সেখান থেকে চলে এসে দূর্গাপুরে নির্মিত হয় রাজপ্রাসাদ ও দেবী দূর্গার মন্দির। মহালয়ার দিন থেকে রাজবাড়ির পূজোকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালা, থিয়েটার, সার্কাসের আসর বসত। পূজোর কটাদিন এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের ভোজনের ব্যাবস্থাও থাকত। আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতেন সকলেই। কালের পরিবর্তনে সেসব এখন ইতিহাস। তবে রাজবাড়ির দূর্গাপূজা নিয়ে এখনও এলাকার মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে। কিন্তু এবছর করোনার আবহে সেটুকুও বন্ধ করতে হয়েছে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে হাজার মানুষের সমাগম আটকাতে এবার প্রতিমা পূজো বন্ধ করে শুধুমাত্র ঘটপূজো করছেন রাজ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের বংশধরেরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here