চারজন প্রতিবন্ধী নিয়ে গঙ্গারামপুর শহরের বুরুজপাড়ার এক পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে

0
14

চারজন প্রতিবন্ধী নিয়ে গঙ্গারামপুর শহরের বুরুজপাড়ার এক পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে, সকলকে পাশে দাঁড়ানোর আবেদন পরিবারের
শীতল চক্রবর্তী,বালুরঘাট,২২ জুন,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ-
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর পুরসভার ১০নম্বর ওয়ার্ডের বুরুজপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুনা প্রসাদ গুপ্তার পরিবার কার্যত কোন মতে বেঁচে থেকে জীবনযাপন করছে।একই পরিবারের চারজন প্রায় ৯০% বা তার বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সরকারি রেশনের চাল আর ভাতা ছাড়া তাঁদের আর কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস নেই।বর্তমানে সেই রেশনের চাল আর ভাতার টাকাও প্রায় শেষের পথে।বর্তমানে পরিবারটির দিন কাটছে অর্ধাহারে,মুনা প্রসাদ গুপ্তা শারীরিকভাবে অসুস্থ হবার কারণে ।তাদের অনাহারের পরিস্থিতি মত তৈরি হয়েছে বলে মুন্না ও তার স্থানীয়দের অভিযোগ।পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে।
জানা গিয়েছে,পরিবারের কর্তা মুনা প্রসাদ গুপ্তা নিজেই প্রায় ৯০% প্রতিবন্ধী।দু’পা ভাঁজ করে কোনোমতে টিকিট বিক্রির ছোট ব্যবসা চালিয়ে সংসার সামলানোর চেষ্টা করেন তিনি। বর্তমানে পুরনো ট্রাই সাইকেল ভেঙে যাওর কারনে তিনি সেই ব্যবসা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তার।তাঁর স্ত্রী বিমলা রাজবংশী(গুপ্তা)একইভাবে শারীরিকভাবে অক্ষম,কুনুইয়ের ভর দিয়ে কোনোমতে বাড়ির ভেতর হাঁটাচলা করেন।তাঁদের মেয়ে সোনিয়া গুপ্তা পিড়িতে বসে বসে চলাফেরা করে,তবুও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্থানীয় কলেজে পড়াশোনা শেষ করে এলাকার একজন যুবককে বিয়ে করেছে সে।একমাত্র ছেলে মহাদেব প্রসাদ গুপ্তা পুরোপুরি দৃষ্টিহীন,সে বর্তমানে কলকাতার রামকৃষ্ণ একাডেমিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে । কলেজের হোস্টেলে থাকার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে তার প্রতিবন্ধী পরিবারটি।
মুন্না প্রসাদ গুপ্তার পরিবার সূত্রের খবর,সরকারের দেওয়া ভাতা এই পরিবারের মেয়ে বাদে তিনজন,যার টাকা দিয়েই কোন মতে সংসার চলে তার।তাঁদের থাকার জায়গা বলতে মুলি বাঁশ আর টিনের ছাউনি দেওয়া একটি মাত্র কক্ষ ছিল,আর রান্নার জন্য বাইরে বারান্দার পাশে একটি মাটির উনুনই ভরসা।যা বহু কাটখড় পুড়িয়ে মুন্না বাবুকে পৌরসভা থেকে সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছে একটি ঘর।
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন,স্থানীয় ক্লাব একসময় কিছু চাল-ডাল দিয়ে সহায়তা করেছিল, পুরসভা থেকেও একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। মাসে যদি জিয়ারের টোকনের ব্যবস্থা করে তাহলে ভালো হয়।পরিস্থিতির চাপে বর্তমান অবস্থায় আরও বেশি সাহায্য প্রয়োজন ওই পরিবারটির। প্রতিবেশী মনোনিলা সেফাকি সরকার,রাজবংশী দীপঙ্কর সরকাবেরা বলেন,”মুন্নাবাবু নিজেও শারীরিকভাবে অসুস্থ তার একটি ট্রাই সাইকেলেই না থাকায় চলাচল করতে পারছে না সে মুন্নবাবু।ওদের পরিবারটা খুবই অসহায়,তাই এমন কঠিন সময়ে সকলে যদি পাশে দাঁড়ায়,সেটাই চাই।”
বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে জানাজানি হওয়ার পরেই গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র ও ভাইস চেয়ারম্যান জয়ন্ত কুমার দাসেরা জানিয়েছেন, “পরিবারটি কেন পর্যাপ্ত সাহায্য পাচ্ছে না,তা খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রও আশ্বাস দিয়েছেন,”বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা করার।”
গঙ্গারামপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিষেক শুক্লাও জানিয়েছেন,”খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই মুহূর্তে মুনা প্রসাদ গুপ্তার পরিবার সকলের কাছে একটাই অনুরোধ রেখেছেন — “কেউ যদি পাশে দাঁড়ান, তাহলে হয়তো বাঁচতে পারি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here