চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা!

0
134

চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা! গঙ্গারামপুরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর গড়ে ধরা পড়ল ভুয়ো ‘কেন্দ্রীয় প্রকল্প’-এর চক্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট, ২০ এপ্রিল —— নামে কেন্দ্র, কাজে প্রতারণা! কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর গড়ে স্বাস্থ্য প্রকল্পের নামে চাকরির টোপ দিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে কয়েকশো গৃহবধূ ও যুবতীকে ঠকিয়ে কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ। শনিবার রাতে তোলপাড় শহর। স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক অফিস থেকে হাতেনাতে ধরা পড়ল ভুয়ো সংস্থার তিন মূলচক্রী।

প্রতারিতদের দাবি, ‘স্মার্ট ভ্যালু নারিস হেলথ’ নামের ওই অফিসটি চালু হয়েছিল বছরখানেক আগে। প্রচার ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পে নিয়োগ চলছে। নার্সিং ট্রেনিং থেকে শুরু করে মেডিসিন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, এমনকি “ডাক্তারি প্রশিক্ষণ” পর্যন্ত! কারও কাছে নেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার, কারও কাছ থেকে ৩৫। শুধু তাই নয়, মহিলাদের দিয়ে ভুয়ো ওষুধ বিক্রি করানো সহ তাদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। প্রতারিত মহিলাদের দাবি, টাকা দেবার উপযুক্ত রসিদ রয়েছে তাঁদের হাতে।

শনিবার সন্ধ্যায় কানাঘুষো শোনার পর একাধিক গৃহবধূ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে বুঝতে পারেন, প্রতারকরা অফিসটি বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে পালাতে চাইছে। সঙ্গে সঙ্গেই খবর যায় স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে। যে খবর পেয়েই তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রঞ্জন প্রামাণিক ও ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৌশিক সাহা পৌঁছান ঘটনাস্থলে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। এরপর রাতেই গ্রেফতার করা হয় কৃষ্ণকান্ত মণ্ডল, অসীম জানা ও পবিত্র জানা নামে তিন অভিযুক্তকে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের মধ্যে কেউ পূর্ব মেদিনীপুরের, কেউ আবার নন্দীগ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গঙ্গারামপুর, ফুলবাড়ি, বেলবাড়ি, রাঘবপুর সহ একাধিক এলাকার প্রায় ৩০০ জন প্রতারিত গৃহবধূ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, শুধু চাকরির প্রলোভন নয়, কেউ কেউ শ্লীলতাহানির শিকারও হয়েছেন। এমনকি এক প্রতারক নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দিয়ে ভুয়ো ওষুধও বিক্রি করত!

প্রতারিত গৃহবধূ লক্ষ্মী রাজবংশী বলেন, “আমরা কেন্দ্রের চাকরির স্বপ্নে টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু আজ বুঝছি কত বড় ভুল করেছি।” সুমনা পারভিনের অনুরোধ, “কোনও চাকরির প্রলোভনে আর কেউ যেন না পড়েন। আমরা ঠকেছি, আপনারা না ঠকুন।”

তৃণমূল নেতা রঞ্জন প্রামাণিক ও কৌশিক সাহার মন্তব্য, “মানুষ বিপদে পড়লে তৃণমূলই পাশে থাকে।”
বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর তোপ, “এরা তৃণমূলের আশ্রয়ে ছিল বলেই এতদিন বাঁচতে পেরেছে।”

গঙ্গারামপুর থানার আইসি শান্তনু মিত্র জানান, “তিনজনকে ধরা হয়েছে, বাকিদের খোঁজ চলছে। তদন্ত চলছে সবদিক থেকে।”

তবে সব মিলিয়ে প্রশ্ন একটাই—এক বছরের বেশি সময় ধরে শহরের বুকে কীভাবে চলল এত বড় প্রতারণার কারবার? প্রশাসন কি চোখ বন্ধ করে রেখেছিল? নাকি কেউ ‘চোখ বুজিয়ে’ রেখেছিল?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here