ঘুমের মধ্যেই গলা কেটে খুন! ভাইপো সাদ্দামকে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসিয়ে ছক কাকিমার, তপনে মালদার ব্যবসায়ী খুনের পুনঃনির্মাণে উদ্ধার ধারালো অস্ত্র ও শিলনোড়া
বালুরঘাট, ৯ জুন —-ঘুমন্ত অবস্থাতেই সাদ্দামের গলা কেটে খুন করে মৌমিতা! মালদার ব্যবসায়ী খুনের পুনঃনির্মাণে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। উদ্ধার হল ধারালো অস্ত্র ও একটি শিলনোড়া। যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে খুন করার পাশাপাশি শিলনোড়া দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে মৃত সাদ্দাম নাদাবের মোবাইল ফোনটি। ধৃত মৌমিতাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমনই সব তথ্য হাতে পায় পুলিশ। যদিও সাদ্দামের মোবাইল ফোন এখনও উদ্ধার করতে পারে নি পুলিশ। সোমবার বিকেলে এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয় দক্ষিন দিনাজপুরের তপনের সিহুর এলাকায়। এদিন ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা বালি ও সিমেন্টের বেশকিছু সংমিশ্রণও উদ্ধার করেছে পুলিশ। উঠে এসেছে বেশকিছু নতুন তথ্যও।
প্রসঙ্গত, তপন থানার সিহুর গ্রামের বাসিন্দা বসির হাসানের মেয়ে মৌমিতা হাসান ওরফে রানী। গত কয়েক বছর আগে মালদা জেলার পুকুরিয়ার নাদাপ পাড়ার বাসিন্দা পেশায় হাইস্কুল শিক্ষক রহমান নাদাপের সঙ্গে মৌমিতার বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের দুই ছেলেও রয়েছে। মৌমিতার ভাইপো সাদ্দাম নাদাপ পেশায় ঠিকাদার। অভিযোগ, যে সাদ্দামের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর কাকিমা মৌমিতা গোপন প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। গত ১৮ মে মৌমিতা তপনের সিহুর বালকাহারা গ্রামে তাঁর বাপের বাড়িতে সাদ্দামকে ডেকে এনে কুপিয়ে খুন করে তার দেহ লোপাট করবার চেষ্টা করে। বস্তাবন্দি করে মৃত সাদ্দামের দেহ ইটের বাঙ্কারে রেখে সেই বাঙ্কারের দরজা ইটের দেওয়াল তুলে প্লাস্টার করে দেয় অভিযুক্ত কাকিমা। যে ঘটনার পরেই ইংরেজবাজার থানার পুলিশ অভিযুক্ত মৌমিতা ও তার স্বামী রহমানকে গ্রেফতার করে দুদফায় মোট চৌদ্দ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়। যেখান থেকেই এই খুনের একাধিক তথ্য হাতে পায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। এদিন যে ঘটনার যৌথভাবে পুনঃনির্মাণ করে ইংরেজবাজার ও তপন থানার পুলিশ। মালদা থেকে নিয়ে আসা হয় ঘটনার মূল দুই অভিযুক্ত মৌমিতা ও রহমান নাদাব কে। সিহুরে যে পুন:নির্মান করতে গিয়েই পুলিশের সামনে উঠে আসে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সাদ্দামকে খুনের পরিকল্পনা বেশ কয়েকদিন আগেই সেরেছিল অভিযুক্তরা বলে জানতে পারে পুলিশ। যে হিসাব মতো ওইদিন রাতে সাদ্দামকে মালদা থেকে স্কুটিতে করে তপনে নিয়ে আসে মৌমিতা। যে সময় তার স্বামী রহমান উপরে লুকিয়ে ছিলেন। যে কথা জানতেন না সাদ্দাম নিজে। এরপর মৌমিতার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেই পরিকল্পনা মতো বাড়িতে রাখা ধারালো অস্ত্র সাদ্দামের গলায় বসিয়ে দেয় মৌমিতা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শরীরের একাধিক জায়গায় কোপানো হয়েছে। যারপরেই তার দেহ বস্তাবন্দি করে ঘরের কুঠুরিতে লুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ঘরের মেঝেতে রক্ত ঢাকতে ধান ঢেলে দেওয়া হয়। এদিন ধান সরাতেই যে রক্তের নমুনা পায় পুলিশ। একইসাথে খুনের কাজে ব্যবহৃত সেই ধারালো অস্ত্রটিও উদ্ধার হয় রান্নাঘর থেকে। উদ্ধার হয়েছে সাদ্দামের মোবাইল ভেঙে ফেলার কাজে ব্যবহৃত শিলনোড়াটিও। যেসব উদ্ধার করেই এই খুনের ঘটনার পুন:নির্মান প্রক্রিয়া শেষ করে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা কাকসার সরকার বলেন, ভয়ঙ্কর খুনের ঘটনার তদন্তে এদিন অস্ত্র সহ বেশকিছু জিনিস উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের এলাকায় যে এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটতে পারে তা কল্পনাও তারা করতে পারছেন না। যা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত তারা।
চন্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাহুল সরকার বলেন, সাদ্দাম নাদাব খুনের পুন:নির্মান করতেই পুলিশ এসেছে। বেশকিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে এদিন তাদের বাড়ি থেকে।
ইংরেজবাজার থানার সাব ইন্সপেক্টর তিমির বরন রায় এদিন পুন:নির্মাণ করতে গিয়ে বলেন, অভিযুক্ত দুজনকে নিয়ে তপনে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছেন।