মালদা:-গঙ্গা ও ফুলহারের জলে প্লাবিত রতুয়া এক নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তত কুড়িটি গ্রাম। জলবন্দি কয়েক হাজার মানুষ।ওই সমস্ত গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে৷ পানীয় জলের হাহাকার গ্রামগুলিতে৷ এখনো কোনো সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ বন্যা দুর্গতদের। ত্রাণ না পৌঁছানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। বিডিওকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ মালদা জেলা শাসকের।

গত এক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে গঙ্গা আর ফুলহারের জলস্তর৷ গঙ্গা রবিবারই বিপদসীমা পেরিয়ে গিয়েছে৷ দুই নদীর জলস্তর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এক সপ্তাহ আগেই জল ঢুকতে শুরু করেছিল অসংরক্ষিত এলাকাগুলিতে৷ গত দু’দিন ধরে প্রবল বেগে জল ঢুকছে ওই সমস্ত এলাকায়৷বিলাইমারির রুহিমারি, গঙ্গারামটোলা, দ্বারকটোলা, শিসাবন্না, হাটপাড়া সহ ১০টি গ্রামে জল ঢুকেছে৷ মহানন্দটোলার সম্বলপুর, কোতুয়ালি, জিয়ারামটোলা, বঙ্কুটোলা, বোধনটোলা সহ ১০টি গ্রামও এখন জলের তলায়৷ শুধু কৃষিজমি কিংবা পাড়া নয়, জল ঢুকতে শুরু করেছে অনেক বাড়িতেও৷ সেসব বাড়ির লোকজন নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে শুরু করেছেন৷ তবে এলাকা ছেড়ে কেউ ফ্লাড সেন্টারে যেতে নারাজ৷
মহানন্দটোলা পঞ্চায়েতের বন্যা দুর্গত হিমাংশু মিশ্র বলেন, ‘৮-১০ দিন ধরে জল বাড়ছে৷ বাড়িতে নদীর জল ঢুকে পড়েছে৷ এই পঞ্চায়েতের ১০টি গ্রাম এখন জলের নীচে৷ বিলাইমারি পঞ্চায়েতেরও ১০টি গ্রাম এই মুহূর্তে জলে ভাসছে৷ আমরা শুকনো খাবার খেয়ে কোনওরকমে বেঁচে আছি৷ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সহায়তা পাইনি৷ যাতায়াতের জন্য নৌকার ব্যবস্থাও করা হয়নি৷ এক গলা জল ভেঙেই যাতায়াত করতে হচ্ছে৷ গঙ্গা আর ফুলহরের জলে আমাদের এই দশা৷’

কোতুয়ালি গ্রামের বানভাসি আরতি মণ্ডলের বলেন, ‘আটদিন ধরে বাড়ির উঠোনে জল৷ এখন ঘরের ভিতর জল ঢুকে গিয়েছে৷ অন্যের উঁচু জায়গায় চলে গিয়েছি৷ শুকনো খাবার খাচ্ছি৷ খাবার জলের ব্যবস্থা নেই৷ প্রশাসনের কেউ এখনও আসেনি৷ একটা পলিথিনও জোটেনি৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা গবাদি পশুর৷ ওদের খাবার নেই৷ কী করে গোরুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখব, জানি না৷’

গ্রামের একটি আমবাগানে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন সম্বলপুরের অর্জুন মণ্ডল৷ তিনি জানান, ‘চারদিন আগে ঘরে জল ঢুকে পড়েছে৷ তাই এই বাগানে চলে এসেছি৷ একটা ছেঁড়া ত্রিপল ছিল৷ সেটাই মাথার উপর টাঙিয়েছি৷ এখনও প্রশাসনের কেউ এলাকায় আসেনি৷ ত্রাণও জোটেনি৷ এভাবে কতদিন চলতে হবে, জানা নেই৷

মহানন্দটোলা পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণা সাহা জানান, ‘গঙ্গা আর ফুলহরের জল এক সপ্তাহ ধরে বেড়ে চলেছে৷আমার পঞ্চায়েতের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা এখন জলের তলায়৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন৷ এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা পানীয় জলের৷ গোখাদ্যেরও সমস্যা প্রচণ্ড৷ পানীয় জল, শুকনো খাবার আর ত্রিপলের জন্য বিডিওকে জানিয়েছি৷ বানভাসি মানুষের জন্য দুটো ফ্লাড সেন্টার খোলা হয়েছে৷ কিন্তু মানুষ বাড়িতে জিনিসপত্র, গোরু-বাছুর ছেড়ে যেতে চাইছে না৷ গোটা বিষয়টি বিডিওকে জানিয়েছি৷ ব্লক প্রশাসনের কাছে ত্রাণ সামগ্রীরও আবেদন জানানো হয়েছে৷’।

মালদার জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন , পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ মজুদ আছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত বিডিওকে ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দিয়েছি।