গঙ্গারামপুর ব্লকে সয়রাপুরের ডাকাতদের ৫০০বছরের কালীপূজা এখন জমিদারদের পরে সার্বজনীনভাবে শ্যামা মায়ের পুজো হয়

0
269

গঙ্গারামপুর ব্লকে সয়রাপুরের ডাকাতদের ৫০০বছরের কালীপূজা এখন জমিদারদের পরে সার্বজনীনভাবে শ্যামা মায়ের পুজো হয়, থাকে ভক্তি ও নিস্টার পাশাপাশি একাধিক নিয়মও

গঙ্গারামপুর ১০ নভেম্বর দক্ষিণ দিনাজপুর।মায়ের পুজো ও আরাধনা করে ডাকাতি করতে বের হতেন ডাকাত দল।ডাকাতদের প্রতিষ্ঠিত মাকে আজও নিষ্ঠা সহকারে পুজো করে আসছেন জমিদারের বংশধরা।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের সয়রাপুর গ্রামে ডাকাতদের প্রতিষ্ঠিত পুজো ঘিরে প্রস্তূতি তুঙ্গে উঠেছে।পুজো দিয়ে রয়েছে বিশেষ নিয়মও, এলাকায় বসে বিরাট মেলাও। সব মিলিয়ে সয়রাপুরের এই পুজোকে ঘিরে সাজো সাজোরব।
আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা।সেসময় গঙ্গারামপুর ব্লকের সয়রাপুরের জমিদার ছিলেন ধ্রুবনাথ দাস। দিনের বেলায় সয়রাপুর এলাকায় হিংস্র জীব জন্তু ঘোরাফেরা করত বলে জমিদারদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।এলাকার চারদিক ছিল ঘন বন জঙ্গলে ঘেরা। জনশ্রুতি যৎসামান্য ।সন্ধ্যে নামলে সয়রাপুরের গভীর জঙ্গলে ডাকাত দল আস্তানা গাড়ত। ডাকাতদের আনাগোনা বাড়ায় এলাকার মানুষ ভয়ে সিটিয়ে থাকতেন সেই সময় বলে খবর। মাঝে মধ্যে ডাকাতদল রাতের অন্ধকারে গভীর জঙ্গলে মশাল জ্বালিয়ে পুজো অর্চনা করত বলে জানা গিয়েছে। তারপর বেরিয়ে যেত ডাকাতি করার উদ্দেশ্য।ডাকাতদের কার্যসিদ্ধি হলে ফিরে এসে ধুমধুম সহকারে মায়ের পুজো করত তারা। জমিদার ধ্রুবনাথ দাসের কাছে ডাকাতদের পুজো করার খবর পৌঁচ্ছায়। এরপরেই জমিদার ধ্রুবনাথ তাঁর দলবলকে নিয়ে জঙ্গলে হাজির হয়। সেখানে গিয়ে দেখতে পান পাঁচটি পাথর সহ মায়ের মূর্তি রয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতদের পুজো করা পাথর গুলি ও মূর্তি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর ডাকাতদের পুজো প্রতিষ্ঠা করেন বাড়িতে।
উদ্ধার হওয়া পাথরগুলি গনেশ,সূর্য,বিষ্ণু,শিব ও দুর্গা রুপে পুজিত হয়ে থাকে বহু দিন ধরেই।
জানা গিয়েছে জমিদার ধ্রুবনাথ দাস বেশ কয়েক বছর নিজ হাতে মায়ের পুজোর দায়িত্বসামলেছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। প্রয়াত হন জমিদার ধ্রুবনাথ দাস। জমিদার প্রয়াত হবার পর পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলেদেন জমিদারের আত্মীয় সতীশচন্দ্র দাস। তিনি প্রয়াত হবার পর পুজোর দায়িত্ব পান তাঁর ভাই বঙ্কিমচন্দ্র দাস। বঙ্কিম বাবু প্রয়াত হবার পর বারোয়ারী পুজোয় রুপ পায়। বারোয়ারী পুজোয় রুপ পেলেও পুজোর দায়িত্ব থাকে জমিদারের বংশধরদের হাতেই।যা বর্তমানে জমিদারের বংশধর শুখেন্দু দাস কিছুদিন পুজোর দায়িত্বভার পেয়েছিলেন। তিনিও একজন প্রয়াত হয়েছেন। বর্তমানে পুজোর দায়িত্ব সামলে আসছেন তাদের এক বংশধর প্রশান্ত দাস।
প্রশান্ত দাসের পরিবার সূত্রে জানা গেছে সয়রাপুরের জমিদারের পুজোয় বলিপ্রথা রয়েছে। মায়ের চক্ষুদানের সময় পশু বলি দেওয়া হয়।যে নিয়ম বহুদিন ধরেই চলে আসছে ।পুজোয় মন্ডল প্রথা রয়েছে। মন্ডলের বাড়িতে প্রতিমা তৈরি করা হয়।যেহেতু এক সময় ডাকাতদের পুজো দিল তাই মন্ডলের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে মাকে কাঁধে করে আলো দেখিয়ে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।এই পুজোয় বাইরে থেকে কোনো চাঁদা তোলা হয় না। জমিদারদের দেওয়া মায়ের নামে পুকুর ও জমি রয়েছে। সারাবছর চাষাবাদ ও মাছচাষ করে যা আয় হয় সেটা দিয়ে পুজো হয়।পুজো ঘিরে বসে মেলা। দুর দুরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা।
পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র সরকার, নাথুরাম সরকারদের কথায় শুনেছি এক সময় জঙ্গলে ডাকাতরা পুজো করত। সেটা জমিদার জানতে পেরে পাথরের মূর্তি উদ্ধার করে পুজো করেন। প্রতিবছর আমরা এই পুজোয় অংশ নেই। পুজোর জন্য আত্মীয় স্বজনরা বাইরে থেকে আসেন। জমিদারের বংশধর প্রশান্ত দাস জানান,এক সময় সয়রাপুর এলাকা গভীর জঙ্গলে ভর্তি ছিল। সে সময় মশাল জ্বালিয়ে কে বা কারা পুজো করতেন। পুজো শেষে চলে যেতে। একদিন জমিদার বিষয়টি জানতে পেরে জঙ্গল থেকে পাথরের মূর্তি গুলি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এবং মন্দির তৈরি করে পুজো শুরু করেন। প্রশান্ত বাবু জানান বংশ পরস্পরায় আমরা এই পুজো করে আসছি।এবছরও নিয়ম নিষ্টা সহকারে পুজো করা হবে।
গ্রামবাসী তারাপদ বর্মন, রীনা বর্মনারা বলেন,আমরা মা কে কাঁধে নিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেটে জমিদারের বাড়িতে যাই। সেখানে জমিদার বংশের বূধরা মাকে পুজো হয়।এরপর আলো দেখিয়ে মাকে মন্দিরে নিয়ে আসি।এবছরও সেই নিয়ম অনুযায়ী মায়ের পুজো হবে। দীপান্বিতা অমাবস্যার দিনে শয়রাপুরের এই সার্বজনীন কালীমাতার পূজো হয়, সেদিন অবশ্য দাস পরিবারের অন্যতম বংশধর কুসুম দাস কালীমাতার পুজোর দিন সেখানে উপস্থিত থেকে মাকে যেমন পূজা দেন তেমনই সকলের সঙ্গে মিলিতভাবে দিনটি পালন করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here