গঙ্গারামপুরে সয়রাপুরের জমিদার বাড়ির পুজো আজও হয়ে আসে নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে, ২ কিলোমিটার দূর থেকে মাকে বাসের পালকিতে নিয়ে আসা হয়। বসে মেলাও, আত্মীয়-স্বজনরা পুজোর জন্য ছুটে আসেন
শীতল চক্রবর্তী গঙ্গারামপুর ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ দিনাজপুর।
ডাকাতদের পূজিত শ্যামা মাকে আজও পুজো করে চলেছে জমিদার বংশের বংশধরেরা। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা হাত বাড়িয়েছে এলাকাবাসীরাও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঙ্গারামপুর ব্লকে সয়রাপুর জমিদার বাড়ি সেই পুজো সভ্যতার উন্নতি হলেও আজও যেন কিছুটা পুরনো রীতিনীতি মেনে করা হয় শ্যামা মায়ের পুজো। দুই কিলোমিটার দূর থেকে মাঠে বাঁশের পালকিতে করে নিয়ে আসা হয়। তান্ত্রিক হতে পূজো হয়ে থাকে সেখানে। পুজা শেষ হতেই পরেরদিন মাকে বিসর্জন দেওয়া হয় পাশে জমিদারের পুকুরেই। পুজাকে কেন্দ্র করে বিরাট আকারে মেলা বসে সেখানে। সমস্ত আশপাশের পরিবার আত্মীয়-স্বজনেরাও ছুটি আসেন সেখানকার শ্যামা মায়ের পুজো দেখার জন্য। সবমিলিয়ে সাজ সাজ রব সয়রাপুরে।
কথিত আছে,আজ থেকে প্রায় ৫০১ বছর আগে বর্তমানের গঙ্গারামপুরের সয়রাঁপুর বিস্তর জঙ্গলে ঢাকা একটি জায়গায় শ্যামা মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন ডাকাতেরা।শ্যামা মা ভক্ত ডাকাতেরা বহু বছর ধরে মায়ের পুজো চালিয়ে আসার পর এক সময় সেই পুজোর ভার নিজের বাঁধে নেন ওই এলাকার জমিদার ধ্রুবনাথ দাস।নিজের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি মন্দির স্থাপন করেন জমিদার ধ্রুব নাথ বাবু।নিষ্ঠা ভক্তি সহকারে সমস্ত নিয়মের মধ্যে দিয়ে বাসের পালকি করে ২২জন মিলে মাকে মন্দিরে নিয়ে এসেন ওই এলাকার জমিদারের বংশধর ওএলাকাবাসীরা। ধুমধাম সহকারে প্রতিবছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা শুরু হয় শ্যামা মায়ের পুজো। মাকে সন্তুষ্ট করতে করা হতো পাঠাবলি।শ্যামা মায়ের পুজাকে ঘিরে আনাগোনা শুরু হয় তন্ত্রসাধকদের। জমজমাট হয়ে উঠতো শ্যামা মায়ের পুজো ।
পরবর্তী সময়ে মন্দিরের নামে বেশ কিছু জমি দান করেন জমিদার ধ্রুবনাথ দাস।
বর্তমানে গঙ্গারামপুরের সয়রাঁপুরের সেই শ্যামা পুজো অতীতের সমস্ত নিয়ম যেন আজও বয়ে চলেছে জমিদারের বংশধরেরা।
বর্তমানে জমিদারের বংশধর প্রশান্ত কুমার দাসের হাত দিয়েই পুজো পরিচালনা হয়ে থাকে। অতীতের নিয়ম অনুযায়ী পালকির বদলে কোনো যানবাহন ছাড়াই এলাকার যুবকেরা কাধে করে মায়ের মূর্তি নেধা পাড়া থেকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বাবু পাড়ায় অবস্থায় জমিদার বাড়িতে।এরপর সেখানে মাকে বরণ করেন জমিদার বাড়ির মহিলারা।বরণ শেষে সয়রাঁপুরের অবস্থিত মন্দিরে নিয়ে এসে ধুমধাম করে পুজো করা হয় শ্যামা মায়ের।প্রায় দুই থেকে তিনশো পাঠাবলি দেওয়া হয় সেইদিন।পুজোকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা।দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন পুজো দিতে।
এবিষয়ে জমিদারের বংশধর প্রশান্ত কুমার দাস বলেন,পূর্ব পুরুষেরা এই পুজো শুরু করেছিলেন ,বহু পুরনো এই পুজো বর্তমানে আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি।দুর দুরন্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই পুজো দেখতে।
বাদল চন্দ্র সরকার সহ তিন গ্রামবাসী জানালেন, মায়ের সমস্ত নিয়ম মেনে পুজো হয়ে থাকে। এই সময় সকল আত্মীয়-স্বজনেরাও তাদের বাড়িতে ছুটে আসেন। সেখানে মেলা পাশাপাশি মনসামঙ্গল গান হয়। আমরা খুবই আনন্দ করে থাকি।
এ বছরও যে সয়রাপুরের শ্যামা মায়ের পুজো ও মেলাতে ভক্তদের ভিড় হবে সে বিষয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।