কাদা-জল ডিঙিয়ে কোদাল হাতে বিদ্রোহ!দুই দশকের অবহেলা ঘোচাতে তপনে রাস্তায় নামলেন শিবপুরবাসী**
দক্ষিণ দিনাজপুর, ৫ জুলাই:
দু’দশকের অপেক্ষা। বারবার দাবি, ফের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তবুও বদলায়নি ভাগ্য। অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল শিবপুরে। রাস্তা চেয়ে আর হাত পাতবেন না তাঁরা। কোদাল হাতে তুলে, গর্তে মাটি ফেলে, নিজেই নিজের রাস্তা গড়ছেন শিবপুরের মানুষ। যেন উন্নয়নকে ‘ভিখারির থালা’ নয়, রক্ত-মাটির হাতে কুড়িয়ে আনার এক বিদ্রোহ।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপনের মালঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবপুর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তা গত ২০ বছর ধরে পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। বর্ষায় হাঁটু কাদা, শীতে ধুলোর ঝড়। অন্তত ৫০০ মিটার রাস্তা একেবারে চলাচলের অযোগ্য।
এই রাস্তার উপর নির্ভরশীল ধুনধি পাড়া, যদুবাটি, পাতকোলা, কাশীবাড়ি-সহ সাত-আটটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ। যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়ে বর্ষাকালে। শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ রোগীকে পৌঁছাতে হয় বাঁশের চেংদোলা করে।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক কর্মীর কথায়, “শিশুদের খাওয়ার জিনিস পৌঁছাতেও হাঁটু কাদা পেরোতে হয়। প্রশাসনকে কতবার বলেছি, কেউ কানে তোলে না।”
অভিযোগ, প্রায় এক বছর আগে রাস্তার কাজ শুরু হলেও ‘টাকা নেই’ বলে মাঝপথে গা ঢাকা দেয় ঠিকাদার। তারপর আর খোঁজ নেই। প্রশাসনও নিশ্চুপ।
এই পরিস্থিতিতেই, শনিবার সকালে রীতিমতো স্বেচ্ছাশ্রমে পথে নামেন শতাধিক গ্রামবাসী। হাতে কোদাল, কাস্তে, ঝুড়ি, বাঁশ—জল বেরনোর ড্রেন, গর্ত ভরাট, পাথর ফেলা—নিজেদের মতো করে রাস্তা সংস্কার শুরু করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সামিম মন্ডল ও নিশ্চয় মন্ডলরা বললেন, “দুপুরের ভাত না খেলেও রাস্তা হবে—এটাই প্রতিজ্ঞা। আর বিশ্বাস নেই নেতার, ঠিকাদারের, সরকারি অফিসারের কথায়।”
প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে যাননি। তবে এই দৃশ্য দেখে নিঃসন্দেহে প্রশ্ন উঠছে—মানুষ যখন নিজেই কাজ করতে বাধ্য হন, তখন সরকারের কাজটা কী?