করোনার কোপে খবরের কাগজ, আর তাতেই পেটে টান পড়েছে খবরের কাগজ বিক্রির সাথে যুক্ত হকার থেকে এজেন্ট। করোনার আশঙ্কায় খবরের কাগজ আর কেউ হাতে নিয়ে পড়তে চাইছেন না। ফলে উত্তর দিনাজপুর জেলার শয়ে শয়ে হকার আর এজেন্টরা চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে অনেকেই খবরের কাগজ বিক্রির পেশা বদল করে উপার্জনের অন্য পথ খুঁজছেন।
সাধারন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত মানুষ প্রায় প্রত্যেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চায়ের সাথে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেওয়াটা রোজকার অভ্যাস। অনেকেই আবার বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজার যাওয়ার পথে ফুটপাতে থাকা হকারের কাছ থেকে খবরের কাগজটা কিনে নিয়েই বাড়ি ফেরেন। কিন্তু করোনা আবহে খবরের কাগজ বিক্রি একধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। খবরের কাগজের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায় সাধারন মানুষ অনেকেই বাড়িতে খবরের কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বিক্রি কমে গিয়ে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন খবরের কাগজের হকার থেকে এজেন্টরা। উত্তর দিনাজপুর জেলায় ২০/২৫ বছর ধরে খবরের কাগজ বিক্রির পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন কয়েকশো মানুষ। রোদ ঝড় জল বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে আসছেন তাঁরা। খবরের কাগজ বিক্রি ও ফেরি করে মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা রোজগার করতেন তাঁরা। এদিয়েই তাঁদের সংসার প্রতিপালন হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার আবহে মানুষ খবরের কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় বিক্রি অর্দ্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। দিলীপ মন্ডল, সুজয় খান, গৌরাঙ্গ সাহা নামে খবরের কাগজের হকাররা জানিয়েছেন, খবরের কাগজের ব্যাবসা এখন চরম সংকটের মুখে। করোনা আবহের আগে দৈনিক ৩০০/৪০০ খবরের কাগজ বিক্রি করতেন তাঁরা, এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৫০/২০০ তে। ফলে রোজগার একেবারেই কমে গিয়েছে। আগে যেখানে প্রতিমাসে খবরের কাগজ বিক্রি করে আট দশ হাজার টাকা রোজগার করতেন তা এখন দাঁড়িয়েছে ৩/৪ হাজার টাকায়। এই আয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালানো এবং পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার প্রতিপালন করা এখন দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে সরকার যদি তাদের উপর নজর না দেয় তাহলে আগামী দিনে অনাহারে মরতে হবে তাদের। আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে তাঁদের। রতন কুমার দে নামে এক খবরের কাগজের এজেন্ট জানিয়েছেন, খবরের কাগজের বিক্রি করোনার কারনে অনেকটাই কমে গিয়েছে, বহু মানুষ বাড়িতে খবরের কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে পেপার বিক্রি কমে যাওয়ায় হকারদের সাথে তাঁরাও চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন। মানুষের মনে ভয় আশঙ্কা গ্রাস করেছে যে খবরের কাগজের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ফলে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সাথে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেওয়ার প্রতিদিনের সেই চেনা ছবি হারিয়ে যেতে বসেছে।





















