আদালতের নির্দেশে বোল্লায় নিষিদ্ধ গণবলি! শর্তসাপেক্ষে চলবে তিনশো বছরের ঐতিহ্যবাহী রক্ষাকালী পুজো
বালুরঘাট, ১৯ অক্টোবর —–তিন শতকেরও বেশি ঐতিহ্য। দেবীর আহ্বানে রাতভর ঢাকের বাদ্য, ধূপের গন্ধে ম-ম মন্দির প্রাঙ্গণ। কিন্তু এ বছর সেই ঐতিহ্যের আবহে মিলেছে আদালতের কড়া নির্দেশের সুর। দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বোল্লা রক্ষাকালী মন্দিরে গণবলি এ বার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে এবার থেকে হবে শর্তসাপেক্ষ বলি— নতুন নিয়মে, নতুন শৃঙ্খলায়।
রবিবার মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে আইনজীবী কল্যাণ চক্রবর্তী ও বিনয়ব্রত ভৌমিক জানান, “আদালতের নির্দেশে বলির স্থান ঘিরে ফেলা হয়েছে। গণবলি একেবারেই হবে না। গর্ভবতী বা অসুস্থ প্রাণী, কিংবা তিন মাসের কম বয়সী পাঠা বলি নিষিদ্ধ। পাশাপাশি, এক বলির পর আরেক বলির মধ্যে থাকবে সময়ের ব্যবধান— যাতে এক প্রাণীর বলি অন্যটি প্রত্যক্ষ না করে।”
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বলির আগে সমস্ত সরকারি ছাড়পত্র ও সার্টিফিকেট সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে আদালতের রায়ের অমান্য হলে পুনরায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেই জানিয়েছেন জনস্বার্থ মামলাকারী কুশল সমাদ্দার।
প্রাচীন কাহিনি বলে, এক ভয়ঙ্কর মহামারীর হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করেছিলেন রক্ষাকালী। সেই থেকে আজও পূজো ঘিরে জনসমাগমে উপচে পড়ে বালুরঘাট ব্লকের বোল্লা গ্রামে। তিন দিন ধরে চলে মেলা— আলোর রোশনাই, ঢাকের তালে ভক্তির সুর, আর এক টুকরো গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে বলি নিয়ে উত্তেজনা ও বিতর্কে জর্জরিত ছিল এই পুজো। গত বছর পতিরাম থানার পক্ষ থেকে মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে সুয়োমোটো মামলা দায়েরের পর এ বছর নজরদারি আরও কড়া।
এ বার তাই দেবীর আহ্বানেও মিশে যাচ্ছে আইনের শাসনের ছোঁয়া। বলির ঢাক এবার বাজবে— কিন্তু সীমারেখার ভেতরে। ঐতিহ্য রইল, কিন্তু নতুন করে লেখা হচ্ছে তার নিয়মের ইতিহাস।