মালদা:- অবশেষে অভিযোগ পাওয়ার পর ভোট-পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে মালদায় এলেন কেন্দ্রীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল। জাতীয় মাইনোরিটি কমিশন এর ভাইস চেয়ারম্যান তথা কেন্দ্রীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য আতিফ রাশিদ এর নেতৃত্বে ৫ জন সদস্যের একটি দল আসে মালদায়। মালদার সার্কিট হাউস থেকে কড়া নিরাপত্তায় এই দলটিকে নিয়ে আসা হয় মালদা গাজোল ব্লকের রানীগঞ্জ 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেনবোনা এলাকায়। বিজেপি সূত্রের খবর , এই এলাকায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে মানবধিকার কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। এর পরেই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন এলাকা পরিদর্শনে আসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ৫ সদস্যের এই দল। আক্রান্তদের সাথে কথা বলেন এই প্রতিনিধি দলটি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ওই এলাকায় কোন স্থানীয় বাসিন্দা দের সাথে কথা বলেননি মানবাধিকার কমিশনের ওই দলটি। এমনকি অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকায় তৃণমূলের 1 কর্মীর বাড়ির সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কোনো সদস্য সেই পরিবারের সাথে কথা বলেননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ এই এলাকায় ভোট পরবর্তী কোন হিংসা হয়নি বরং যা হয়েছে তা এক বিজেপি সদস্যের দলবদল এর প্রভাব।
স্থানীয় সূত্রে খবর রানীগঞ্জ 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপির ঘরে ৭ টি এবং তৃণমূলের ঘরে ৬ টি আসন ছিল। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হতেই পাল্টে যায় সমীকরণ। সম্প্রতি বিজেপির একজন সদস্য যোগদান করেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ফলে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয় বিজেপির এবং তা তৃণমূলের দখলে চলে আসে। যার পর থেকেই পরস্পরবিরোধী আক্রমণের খবর উঠে আসছিল। যা নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। আটক করা হয় বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে।
এদিন মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা যায় এক বিজেপি নেতা কে। জানিয়ে রঙ চড়াতে শুরু করেছে শাসক দল। শাসক দলের দাবি এটি ভোট-পরবর্তী কোন হিংসা নয় কিন্তু এদিকে ভোট পরবর্তী হিংসা হিসেবে চালাতে চাইছে বিজেপি। দলবদলের কারণে ওই এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যদিও স্থানীয় সূত্রে একই দাবি তোলা হচ্ছে। শাসক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের সাথে কেন এই বিজেপি নেতা থাকবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলের সাথে কেন থাকবে বিজেপি নেতা? ভোট-পরবর্তী হিংসা না হলেও কেন শুধুমাত্র একতরফা বিজেপি কর্মীদের সাথে কথা গেলেন মানবাধিকার কমিশনের দল? কেনইবা আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী সমর্থক এর পরিবারের সাথে কথা বলা হলো না?
যদিও বিজেপি নেতার উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেছেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য।
তৃণমূলের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের উপস্থিতির কথা জানাতে গিয়ে বিজেপি নেতার দাবি আমি বিজেপি নেতৃত্বে রয়েছি। এই এলাকাতেই আমার বাড়ি। যার কারণে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ যাতে মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের বোঝাতে পারেন বা মানবাধিকার কমিশনের সদস্যের কথা তারা বুঝতে পারেন সে কারণেই আমার ওখানে যাওয়া। কারণ গ্রামবাংলার অনেক মানুষ রয়েছেন যারা এখনো হিন্দি জানেন না। তৃণমূল একদম মিথ্যে অভিযোগ করছে।
যদিও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শুভময় বসু। এদিন তিনি তীব্র কটাক্ষ করে জানান , এই সংগঠন এখন কেন্দ্রীয় এজেন্সী হিসেবে কাজ করছে। মালদা জেলায় ভোট পরবর্তী হিংসার কোন খবর নেই। নির্বাচনের পরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মোদী অমিত শাহ এর নেতৃত্বে নাটক চলছে। আজ মালদায় তারা নাটক করতে এসেছে। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেছে বেছে বিজেপির কর্মীদের বাড়ি যাচ্ছে কিন্তু আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদের সাথে কথাও বলছেন না। পুরোপুরি বিজেপির হয়ে কাজ করছে এই সংগঠন। আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে পেরে উঠছেন না যার কারণে এই নাটক শুরু করেছেন।
এদিন রানীগঞ্জ 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কেননা এলাকা পরিদর্শন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদলটি গাজোল থানায় আসেন সেখানে গাজোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনার পর পুনরায় মালদার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান।
তবে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে মালদা জেলা গাজোল বিধানসভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিদর্শন এবং মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলের সাথে বিজেপি নেতার উপস্থিতি জেলার রাজনীতিতে অন্য মাত্রা এনে দিচ্ছে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Home বাংলা উত্তর বাংলা অবশেষে অভিযোগ পাওয়ার পর ভোট-পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে মালদায় এলেন কেন্দ্রীয় জাতীয়...