করোনা আবহ কিছুটা কাটিয়ে খুলছে বিদ্যালয় কিন্তু অনেক পড়ুয়াই স্কুলের ব্যাগ ছেড়ে সঙ্গী করেছে ভিনরাজ্যের শ্রমিকের কাজের ব্যাগকে। লকডাউন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় সংসারের হাল ফেরাতে স্কুল পড়ুয়ারা বেছে নিয়েছে ভিনরাজ্যের শ্রমিকের কাজ। কেউ বা দিল্লি, কেউবা হরিয়ানা কেউবা গিয়েছে চেন্নাই ব্যাঙ্গালোরে। স্কুল খুললেও দেখা নেই ওদের। রায়গঞ্জ ব্লকের গৌরি গ্রামপঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের নবম-দশমের প্রায় কয়েকশো পড়ুয়া এখন ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে। ছেলেদের স্কুলমুখী করতে ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলের ছাত্রদের অভিভাবকদের সাথে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক।
প্রতিবেশী রাজ্য বিহার সংলগ্ন উত্তর দিনাজপুর জেলার সদর ব্লক রায়গঞ্জ। এই ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম বিরাহীম খন্ড, রুদ্রখন্ড। গ্রামের বেশকিছু ছাত্র ভিনরাজ্যের শ্রমিকের কাজ করতে চলে গেছে। লকডাউনে দীর্ঘদীন স্কুল বন্ধ থাকায় পেটের তাগিদেই কার্যত নবম দশম শ্রেনীর ছাত্রদের অনেকেই ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে চলে গিয়েছে। দিল্লি,পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর আবার কেউবা গিয়েছে হায়েদ্রাবাদ। গ্রামের বাসিন্দা থেকে ছাত্রদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, লকডাউনে গ্রামের মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল। ছিলনা কোনও কাজ-কর্ম। স্কুলের পড়ুয়ারাও সংসারের সেই আর্থিক অনটনে ধুঁকছিল। পরিবারের সকলের পেটের টানে রুজি রুটির সন্ধানে বেড়িয়ে পড়েছিল কাজের সন্ধানে। নিজের এলাকায় ছিলনা কাজ তাই বাড়িতে বসে সময় নষ্ট না করে অনেকেই ভিনরাজ্যের শ্রমিকের কাজে চলে যায়। স্কুল খোলার পর ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে রত ওইসব ছাত্রদের খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্মস্থল থেকে ছুটি না মেলায় ফিরতে পারছেনা তারা। আর ফিরলেই যে বন্ধ হয়ে যাবে রোজগারের পথ। সংসারের খরচ চলবে কি করে এই প্রশ্নই দেখা দিয়েছে তাদের। কোনও অভিভাবক বলেছেন আমরা খবর দেবো স্কুল খুলেছে। ছেলে যদি ফিরে আসতে চায় তবে আসবে।
এমনই দেখা গিয়েছে রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন মহারাজা জগদীশনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেনীর ছাত্র ছিল রহিমুদ্দিন, হুমায়ুন, সাদেক। পরিবারে বাবা মায়ের কৃষিকাজ আর দিন মজুরিতেই সংসার চলত ওদের। লক ডাউনে সব স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে আর্থিক অনটন দেখা দেয়। ছেলে হয়ে বাবা মায়ের মুখে ভাত জোগাতে পড়াশুনা ছেড়ে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ ছাড়া উপায় ছিল না ওদের। এদিকে আবার স্কুল যে খুলবে কবে তারও কোনও ঠিক ঠিকানা ছিলনা। ফলে রুজি রুটির টানেই মাস কয়েক আগেই হাজার মাইল দূরের রাজ্যে গিয়ে শ্রমিকের কাজে যোগ দিয়েছে ওরা। এখন স্কুল খোলার বিষয়ে জানালে যদি কর্মস্থল থেকে ছুটি পায় তবেই আবার লেখাপড়ায় ফিরতে পারবে। কিন্তু সংসারের অভাবও তো মেটাতে হবে তাদের।
যদিও রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন ভুক্তভোগী মহারাজা জগদীশ নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তামিন সোরেন জানিয়েছেন, এদিন স্কুল খোলার পর দেখা গিয়েছে, স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি অনেক কম। আমরা স্কুলের এ্যক্টিভিটি টেস্টের সময় প্রথম জানতে পারি অনেকে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ওদের ফিরিয়ে আনার। অপরদিকে রায়গঞ্জ ব্লকের গৌরী গ্রামপঞ্চায়েতের বিরাহীমখন্ড, রুদ্রখন্ড গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কোথাও দারিদ্রতার কারনে, কোথাও বা প্রবনতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে অর্থোপার্জনের। যে কারনে অনেক পড়ুয়াই এখন ভিনরাজ্যের শ্রমিক। একপ্রকার বলাই যেতে পারে গ্রামাঞ্চলে কোভিড-১৯ স্কুলছুট পড়ুয়ার সংখ্যা কি তবে বাড়িয়ে দিয়েছে।