প্রেম থেকে ব্ল্যাকমেইল! কাকীমার ঘরের বাঙ্কার থেকে ১৫ দিন পর উদ্ধার ভাইপোর পচাগলা দেহ, তোলপাড় তপন
বালুরঘাট, ২ জুন —– ত্রিকোণ প্রেম! কাকিমার ঘরের বাঙ্কার থেকে ১৫ দিন পর উদ্ধার নিখোঁজ ভাইপোর পচাগলা দেহ। কুপিয়ে খুনের পর ভাইপোর দেহ লোপাট করতেই বাপের বাড়ির বাঙ্কারে ইট দিয়ে প্লাস্টার করে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল মৃতর দেহ। সোমবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো শিউরে উঠেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের চন্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিহুর বালকাহারা গ্রামের বাসিন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম সাদ্দাম নাদাপ (৩২)। ঘটনাকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরে।
জানা গেছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার সিহুর গ্রামের বাসিন্দা বসির মন্ডল। তাঁর মেয়ে মৌমিতা হাসান ওরফে রানী। গত কয়েক বছর আগে মালদা জেলার পুকুরিয়ার নাদাপ পাড়ার বাসিন্দা পেশায় হাইস্কুল শিক্ষক রহমান নাদাপের সঙ্গে মৌমিতার বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের দুই ছেলেও রয়েছে। মৌমিতার ভাইপো সাদ্দাম নাদাপ। সাদ্দাম পেশায় ঠিকাদার। ভিনরাজ্যে তাঁর কাজ চলছে। অভিযোগ, সাদ্দামের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর কাকিমা মৌমিতা গোপন প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে সাদ্দাম মৌমিতাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। গত ১৮ মে মৌমিতা তপনের সিহুর বালকাহারা গ্রামে তাঁর বাপের বাড়িতে সাদ্দামকে ডেকে আনে। যেখানেই মৌমিতা সাদ্দামকে কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ।
খুনের পর ভাইপোর দেহ লোপাট করতে ভয়ানক পরিকল্পনা করে মৌমিতা। প্রথমে দড়ি দিয়ে দেহটিকে বেধে বস্তাবন্দি করা হয়। তারপর বাবার বাড়িতে থাকা ইটের বাঙ্কারে সেই দেহ রেখে তার ভেতরটা ধানের বস্তা দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়। এরপর সেই বাঙ্কারের দরজা ইটের দেওয়াল তুলে প্লাস্টার করে দেয় অভিযুক্ত কাকিমা।
এদিকে স্বামী বাড়ি না ফেরায় গত ২০ মে মৃত সাদ্দামের স্ত্রী নাসরিন খাতুন মালদার ইংলিশ বাজার থানায় নিঁখোজের অভিযোগ করেন। ইংলিশ বাজার থানার পুলিশ যার তদন্তে নেমে ৩১ মে মৌমিতাকে আটক করে শুরু হয় জিঞ্জাসাবাদ।পুলিশের জেরায় মৌমিতা ভেঙে পড়ে এবং সাদ্দামকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় । এরপরেই এদিন সকালে ইংলিশ বাজার থানার পুলিশ মৌমিতাকে নিয়ে হাজির হয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপনে। যেখানে তপন থানার পুলিশের তৎপরতায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মৌমিতাকে নিয়ে হাজির হয় সিহুর বালকাহারা গ্রামে তার বাবার বাড়িতে। কোথায় দেহ রয়েছে? মৌমিতা ছাঁদের বাঙ্কার দেখাতে শুরু হয় দেয়াল ভাঙার কাজ। ইটের দেওয়াল ভেঙে বাঙ্কার থেকে দেহ উদ্ধার হতে পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ। এদিকে বাঙ্কারে দেহ রাখার ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সিহুর সহ তপন জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজনের ভিড় জমে এলাকায়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মোতায়ন করতে করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনা স্থলে ছুঁটে যান তপন ব্লকের বিডিও তীর্থঙ্কর ঘোষ ও তপন থানার আইসি জনমারি ভিয়ান্নে লেপচা।
মৃতের ভাই লাদেন নাদাপ অভিযোগ করে বলেন,আমার দাদা ভিনরাজ্য সহ বিভিন্ন জায়গায় ঠিকাদারি ও লেবার পাঠাত। ঠিকাদারির কোষাধ্যক্ষ ছিল কাকিমা মৌমিতা হাসান। কিন্তু অনেক টাকার হিসাব দিচ্ছিল না। দাদা বাইরে কাজে ছিল। ১৮ মে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। হাওড়া থেকে মালদায় ফিরেও আসে। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। দুই দিন খোঁজাখুজির পর ইংলিশ বাজার থানায় নিখোঁজের অভিযোগ করি। আমার দাদা নিখোঁজের পর থেকে কাকা রহমান নাদাপ,কাকিমা মৌমিতা হাসানের মোবাইলের সুইচ বন্ধ পাই। তখন আমাদের সন্দেহ হলে পুলিশকে বিষয়টি জানাই। তিনি আরো বলেন টাকা পয়সা লেনদেনের জন্য যারা আমার দাদাকে কুপিয়ে খুন করল পুলিশ তাদের সাজা দিক।
যদিও পুলিশের দাবি, কাকিমা মৌমিতার সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল সাদ্দাম নাদাবের। সম্প্রতি সাদ্দাম মৌমিতাকে ব্ল্যাকমেইল করছিল। আর সেই কারণেই খুন বলে জানিয়েছেন মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। তিনি আরো জানিয়েছেন ১৮ তারিখ সাদ্দাম এবং মৌমিতা মালদা থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে যান। সেখানেই তাকে খুন করা হয়। শরীরের একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে।