‘দণ্ডি’ কান্ড নিয়ে প্রদীপ্তার বিরুদ্ধে ফের আগুন জ্বলল বালুরঘাটে

0
1425

মমতা-অভিষেকের নির্দেশ অগ্রাহ্য!
‘দণ্ডি’ কান্ড নিয়ে প্রদীপ্তার বিরুদ্ধে ফের আগুন জ্বলল বালুরঘাটে

বালুরঘাট, ১৩ মে —– দণ্ডি কান্ডে অভিযুক্ত প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে ঘিরে ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দক্ষিণ দিনাজপুরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ উপেক্ষা করে ওই প্রাক্তন নেত্রীকে দলীয় অনুষ্ঠানে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার দুপুরে বালুরঘাটে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল আদিবাসী ঐক্য মঞ্চ।

হাতে পোস্টার, মুখে ক্ষোভের স্লোগান। শহরের কেন্দ্রস্থলে রাস্তায় বসে আদিবাসীরা জানিয়ে দিল, “প্রদীপ্তার অপমানের ক্ষত এখনও দগদগে। ক্ষমার প্রশ্নই নেই।” জেলা প্রশাসকের দফতর ঘিরে চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। যদিও আগে থেকেই মোতায়েন ছিল বিপুল পুলিশবাহিনী। তবে ক্ষোভের আঁচ যে প্রশাসনিক মহলে পৌঁছে গিয়েছে, তা বুঝতে সময় নেয়নি কেউই।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে রাজনৈতিক শিবির বদল করা কয়েকজন আদিবাসী মহিলাকে শাস্তি স্বরূপ ‘দণ্ডি’ কাটাতে বাধ্য করেন তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। আদিবাসী সমাজের ভাষায়, “এ এক চূড়ান্ত অপমান। আমাদের সংস্কৃতিকে কালিমালিপ্ত করেছিল ওঁর কর্মকাণ্ড।” ঘটনার পর তা ধামাচাপা দেওয়ার বহু চেষ্টা হলেও আদিবাসী সমাজের মনে গভীর ক্ষত রেখে যায় ওই ঘটনা।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এঘটনা নিয়ে বিরোধী দলনেতার প্রশ্নের উত্তরে বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ প্রদীপ্তাকে বহিস্কার করার কথা বলেছেন, এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জেলায় এসে সমস্ত পদ থেকে প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে সরিয়ে দেবার কথাও জানিয়ে গিয়েছেন। তারপরেও জেলার কিছু তৃণমূল নেতা কেন তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে তা নিয়েই এদিন সরব হয়েছে আদিবাসী ঐক্য মঞ্চ। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সেসমস্ত তৃণমূল নেতাদের হুশিয়ারি দিয়ে এদিন শ্লোগানও দেন বিক্ষোভকারীরা। মমতার নির্দেশ ভেঙে কেন সেসব তৃণমূল নেতারা আদিবাসী সমাজকে অপমান করা প্রদীপ্তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে তার প্রতিবাদেই বিক্ষোভ দেখায় আদিবাসী ঐক্য মঞ্চ। একইসাথে তার স্বামী তথা সরকারী আইনজীবী ঋতব্রত চক্রবর্তী কেও তার পদ থেকে সরাবার দাবিতে সরব হয়েছেন আদিবাসীরা। যা নিয়ে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুশিয়ারিও দিয়েছে আদিবাসী ঐক্য মঞ্চ। যে ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় জেলাশাসক অফিস চত্বর। কিছুক্ষণের জন্য এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় যান চলাচলও।

আদিবাসী ঐক্য মঞ্চের তরফে রাজা হেমব্রম বলেন, দন্ডি কান্ড ঘটিয়ে প্রদীপ্তা আদিবাসী সমাজকে অপমান করেছে। সবকিছু ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করলেও তাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না আদিবাসী সমাজ। মমতার নির্দেশ ভেঙে দলের যুব সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের পথে জেলায় পা বাড়াবে আদিবাসীরা।

এই ঘটনায় শাসকদলের অন্দরেও ক্রমশ প্রশ্ন বাড়ছে— নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন ‘অপমানকারী’র পাশে এখনও দলের একাংশ? তা হলে কি অভ্যন্তরীণ মতবিরোধেই ধাক্কা খাচ্ছে ‘নেত্রী-নির্দেশ’?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here