গঙ্গারামপুরের উত্তর নারায়ণপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে খুন হলো একজন-মৃত্যু হল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির-উদ্ধার পিস্তল, বোমা, আটক ৬ জন।

0
2527

   শীতল চক্রবর্তী, গঙ্গারামপুর, ১৮ জানুয়ারি, দক্ষিণ দিনাজপুর:-তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে পার্টি অফিসের সামনেই  গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর। সেইসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির রহস্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার ৩/২ বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরঃ নারায়নপুর এলাকায়।মৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের লোকজনেরা এলাকার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। যদিও অপরপক্ষ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে সে কোনভাবেই যুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন তিনি। ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা পিস্তল, চারটি তাজা বোমা উদ্ধার করার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ জনকে আটক করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এলাকায় পুলিশ  পিকেট বসানো হয়েছে। ভোটের আগে তৃণমূলের এমন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঘটনায় শোরগোল পড়েছে এলাকাজুড়ে।

                                পুলিশ জানায় মৃত যুবকের নাম সঞ্জিত সরকার (৩১) বছর। তার বাড়ি গঙ্গারামপুর থানার নারায়ণপুরে।                 অন্যদিকে এই খুনের ঘটনার পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই গুরুতর আহত হয়ে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথানারায়নপুর এলাকার বাসিন্দা কালিপদ সরকারকে নিয়ে আসা হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।এমন ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই সেখানে ছুটে আসেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র, জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দাস, রাজ্যসভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, মিডিয়া কনভেনার জয়ন্ত দাস, জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি ললিতা  টিগ্গা সহ জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতারা।                              

     সূত্রে খবর, নারায়ণপুরে বহুদিন ধরেই একটি দলীয় পার্টি অফিস দখল করাকে কেন্দ্র করে কালিপদ  সরকার ঘনিষ্ঠ সুমন দাসের  সঙ্গে গৌতম ঘনিষ্ঠ  দুলু রায়ের  গোলমাল বহু পুরনো। ইতিমধ্যেই কালিপদ সরকার ঘনিষ্ঠ সুমনের স্ত্রীকে বেশ কয়েক মাস আগে গুলি করেছিল দুলুর লোকজন। সেই ঘটনা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলমাল হয়েছিল। মাঝে আবার ওই পক্ষের মধ্যে গোলমালে কোথায় গোষ্ঠীর লোকজনদের কাছ থেকে পিস্তল, মাস্কেট, গুলি উদ্ধার করেছিল। উভয়পক্ষের বেশকয়েকজন জেল হেফাজতে ছিল। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়।                    

    অভিযোগ এদিন মঙ্গলবার সকালে সঞ্জিত সরকার নারায়ণপুর পার্টি অফিসে মাঠের কাজ সেরে বসে ছিল। তখনই এমন ঘটনা ঘটায় দুস্কৃতিকারীরা। ঘটনা ঘটানোর পরে তারা পালিয়ে যায় বলে খবর। এলাকাবাসীরা উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত সুমন রায়ের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন বলে খবর। পরে জেলা পুলিশ সুপার দেবশ্রী দত্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ,গঙ্গারামপুর থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুন্ডু সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী সেখানে গিয়ে সুমন রায়ের বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার, ফোনের কাজে ব্যবহার করা পিস্তল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকায় বসানো হয় পুলিশ পিকেট।            

    মৃতের মা ও এক এলাকাবাসী, মৃতের আত্মীয় যমুনা সরকারেরা অভিযোগ করে বলেন, সঞ্জিত মাঠ থেকে মাটি কাটার কাজ করে এসে সকালেই নারায়ণপুর পার্টি অফিসে বসে ছিল। সেই সময় সুমন, নেপাল, কালের বাড়ির লোকজন মিলে সঞ্জিতকে গুলি করে খুন করেছে। আমরা চাই দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক। 

                                         নারায়ণগঞ্জ এলাকার গৌতম ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী দুলু রায় অভিযোগ করে বলেন, এলাকারই সুমন, কালিপদ সরকারের বাড়ির লোকজন, নেপালের বাড়ির লোকজন মিলে সঞ্জিতকে খুন করেছে। অভিযুক্তরা ধরা পড়ুক সেটা আমরা চাই।                               গঙ্গারামপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দাস অভিযোগ করে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের স্বক্রিয় কর্মী সঞ্জীত সরকার পার্টি অফিসে বসেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে দুস্কৃতিকারীরা তাকে খুন করে পালিয়ে গেছে। আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মারা গেছে।স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য তার দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দল পর্যবেক্ষণ করছে। বহুদিন ধরেই গঙ্গারামপুর শান্ত ছিল এখন এমন শুরু হল। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক সেটাই চাই।

                                           তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কালিপদ সরকারের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। বহুদিন আমাদের সঙ্গে দল করেছে ও। দলো পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদে ছিল ও। ওই ঘটনায়  ও যুক্ত নয়।                                             

   রাজ্যসভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, ও প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কালিদা হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী সঞ্জিত ও মারা গেছে। দলে কোন সমাজ বিরোধী থাকবে না। তা না হলে তৃণমূল কংগ্রেস যে স্বচ্ছ উন্নয়নের কাজ করেছে তার মানুষের মধ্যে তুলে ধরা সম্ভব হবে না। কোনরকম গুন্ডামি, মস্তানি কার্যকলাপ করা সহ্য করব না।                

   জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, পুলিশ খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা পিস্তল, চারটি তাজা বোমা উদ্ধার করার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে আটক করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।            

      বিধানসভা ভোটের আগে এমন ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে জেলাজুড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here