রায়গঞ্জ:–ঐতিহ্যবাহী বাহিন জমিদার বাড়ির দূর্গাপুজো এখন সার্বজনীন দুর্গোৎসব। ছেড়ে যাওয়া ভগ্নদশাগ্রস্ত জঙ্গলাকীর্ণ প্রাসাদপমো জমিদারবাড়ি এখন ক্ষীন দৃষ্টি নিয়ে অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে রয়েছে। ফিরেও চেয়ে দেখেনা অতীতের জমিদারের আধুনিক বংশধরেরা। আর তাই একসময়ের এলাকার জমিদারের পুজোকে ধরে রেখেছেন রায়গঞ্জের বাহিন গ্রামের দুস্থ গরীব বাসিন্দারা।তবে এবার করোনা আবহে গ্রামের মানুষের আর্থিক সংকটের কারনে সার্বজনীন বাহিন রাজবাড়ির পুজোতেও থাকছেনা কোনও জাঁকজমকতা। জমিদারবাড়ির পুরানো জীর্ণ মন্দিরেই নমো নমো করে পুজো সারবেন বাহিন গ্রামের বাসিন্দারা।
উত্তর দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম পুজো ছিল রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন জমিদারবাড়ির দূর্গাপুজো। অবিভক্ত বাংলাদেশের দিনাজপুরের জমিদার রুদ্র প্রতাপ চৌধুরীর জমিদারি ছিল বাহিন, কুমারজল, মাকড়া, মধুপুর, লহুজগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে। নাগর নদীর ধার ঘেষে ছিল জমিদারের প্রাসাদোপম অট্টালিকা। আর জজমিদারবাড়ির দূর্গাপুজো এলাকার প্রজাদের সাতদিন ধরে ভুড়িভোজ আর আমোদপ্রমোদের আয়োজন। সেসময় বাহিন জমিদারবাড়ির দূর্গোৎসবে বসত যাত্রাপালার আসর, থিয়েটার, সার্কাস ও বিশাল মেলা। জমিদার রুদ্র প্রতাপ চৌধুরীর আমলে এতদঅঞ্চলের প্রজারা দূর্গাপুজার কটাদিন কাটাতেন আমোদে-প্রমোদে। আজ নেই সেই জমিদার, আর জমিদারি প্রথা। জমিদার রুদ্র প্রতাপ চৌধুরীর উত্তরাধিকারীরা বাহিন জমিদারবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন বহুদিন আগে। এখন এখানে পড়ে আছে ভগ্নদশাগ্রস্ত জঙ্গলাকীর্ণ প্রাসাদোপম অট্টালিকা। জমিদারবাড়ির দূর্গাপুজো আর সমস্ত জাঁকজমকপূর্নতা হারিয়ে এলাকার প্রজা থুড়ি গ্রামের গরীব বাসিন্দাদের হাতে। ফিরেও তাকান না স্বর্গীয় জমিদারের শহুরে নবপ্রজন্মের বংশধরেরা
। ঐতিহ্যের বাহিন জমিদারবাড়ির পুজো তাই এখন সার্বজনীন। এলাকার বাসিন্দারাই চাঁদা তুলে জমিদারবাড়ির ঠাকুরদালানে কোনওরকমে মায়ের আরাধনা করে চলেছেন। তবে ঐতিহ্যের ধারাকে অব্যাহত রেখে আজও দশমীতে মেলার আয়োজনটুকু করছেন আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন। আর ওই দশমীর মেলাটিকে আঁকড়ে ধরেই বাহিন জমিদারবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য বজায় রাখার আপ্রান চেষ্টায় এলাকার বাসিন্দারা। বাকিটা সবটুকুই তো ধূলোয় ঢাকা মলিন স্মৃতি। তবে এবার করোনার কারনে সেই মেলাও বন্ধ থাকবে বাহিন জমিদারবাড়ির দূর্গাপুজো প্রাঙ্গনে।